এ কে আজাদ: জহিরুল হক। চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম অ্যাকশন ছবির নির্মান শুরু হয় তাঁর হাত ধরেই। তিনি সামাজিক ছবির সুনিপুণ নির্মাতাও বটে । একের পর এক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্র পরিচালনা করে গেছেন। সুস্হ-বিনোদনমূলক গল্পনির্ভর চলচ্চিত্রের এই অন্যতম সফল নির্মাতা ।
একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো অভিনেতা, একজন ভালো চলচ্চিত্র নির্মাতা জহিরুল হক।
এই স্বনামখ্যাত চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা জহিরুল হক-এর ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ১৯৯৩ সালের ২৫ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫১ বছর। প্রয়াত এই গুণি চিত্রপরিচালকের স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
জহিরুল হক ১৯৪২ সালের ২৮ জানুয়ারি, কুমিল্লা জেলার ভূরভুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ষাটের দশকের শুরু থেকে তিনি ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন এবং নাটক রচনা করতেন।
মঞ্চ থেকে এক সময় অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটে জহিরুল হক-এর। ১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন । এছাড়াও তিনি- আলিঙ্গন, সন্তান, রং বদলায়, পদ্মানদীর মাঝি, অরুণোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী, সংগ্রাম, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, বসুন্ধরা, সারেং বউ, সূর্যদীঘল বাড়ি, ডুমুরেরফুল, ঘর জামাই, এখনই সময়, ঘরণী, রজনীগন্ধা, মহানায়ক, প্রেম কাহিনী, টক্কর, সারেন্ডার, সন্ধি, দুই জীবন, অন্ধবিশ্বাস, আদিল, গর্জন, চোরের বউ, সত্য মিথ্যা, আতংকিত শত্রু, মাস্তান রাজা’সহ আরো অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন।
জহিরুল হক টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন।সংশপ্তক, ফেরা, তমা, ঢাকায় থাকি, ডুপ সাঁতার’সহ বহু টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশন নাটকের একজন দক্ষ অভিনেতা হিসেবে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।
নিজের নির্মিত প্রায় সব ছবির কাহিনী-চিত্রনাট্য ও সংলাপ তিনি নিজেই লিখতেন। এছাড়াও জহিরুল হক অনেক বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রের কাহিনী-চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন। তাঁর লেখা কাহিনী-চিত্রনাট্য ও সংলাপ-এ যেসব চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- আবির্ভাব (কাহিনী), সূর্য ওঠার আগে (কাহিনী-সংলাপ), পালা বদল (সংলাপ), রং বদলায় (কাহিনী-সংলাপ), পদ্মানদীর মাঝি (সংলাপ), নিজেরে হারিয়ে খুঁজি (চিত্রনাট্য-সংলাপ), নাচের পুতুল (চিত্রনাট্য-সংলাপ), রং বদলায় (কাহিনী-সংলাপ), রংবাজ (কাহিনী-চিত্রনাট্য-সংলাপ), সাধু শয়তান (চিত্রনাট্য-সংলাপ), লাঠিয়াল (কাহিনী) প্রভৃতি অন্যতম।
জহিরুল হক-এর পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘রংবাজ’, মুক্তিপায় ১৯৭৩ সালে। তাঁর পরিচালিত অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে-
কি যে করি, দম মারো দম, কেউ কারো নয়, ঘর জামাই, প্রাণ সজনী, প্রেম বন্ধন, চেনামুখ, সারেন্ডার, মরণপন, কুসুমপুরের কদম আলী, বিজয়, জিজ্ঞাসা, গর্জন, রক্তের বদলা, চোরের বউ, জনি ওস্তাদ, সতীনের সংসার, তুমি আমার।
জহিরুল হক পরিচালিত ছবিগুলো যেমন জনপ্রিয় হতো, তেমনই তাঁর ছবির গানগুলোও পেত জনপ্রিয়তা। তাঁর ছবির জনপ্রিয় কালজয়ী কিছু গান- সে যে কেনো এলো না কিছু ভালো লাগে না…, হৈ হৈ রঙিলা রঙিলা রে…, (ছবি- রংবাজ), শোনো গো রুপসী ললনা, আমাকে যখন তখন চোখ রাঙানো চলবে না… (ছবি-কি যে করি), ভালবেসে গেলাম শুধু ভালবাসা পেলাম না…(ছবি- কেউ কারো নয়), ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, রইবো না আর বেশী দিন তোদের মাঝারে…, কি জাদু করিলা পীরিতি শিখাইলা থাকিতে পারি না ঘরেতে… (ছবি-প্রাণসজনী), সবাইতো ভালোবাসা চায়, কেউ পায় কেউ বা হারায়…(ছবি- সারেন্ডার), জ্বালাইয়া প্রেমের বাতি কোথায় তুমি থাকোরে…(ছবি-তুমি আমার) ইত্যাদি।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম অ্যাকশন চলচ্চিত্র ‘রংবাজ’-এর পরিচালক জহিরুল হক। এদেশে অ্যাকশন ছবির নির্মান শুরু হয়, তাঁর হাত ধরেই। সামাজিক ছবির সুনিপুণ নির্মাতা তিনি। একের পর এক ব্যবসাসফল জনপ্রিয় সব ছবি পরিচালনা করেছেন। সুস্হ-বিনোদনমূলক ছবির অন্যতম সফল নির্মাতা জহিরুল হক। তাঁর পরিচালিত সকল ছবিই পেয়েছে জনপ্রিয়তা, হয়েছে প্রসংশিত।
একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো অভিনেতা, একজন ভালো নির্মাতা হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অত্যাধিক সুনাম রয়েছে। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের সবার প্রিয় ‘জহর দা’ তিনি। তিনি জহিরুল হক। যিনি চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ও সিনেমাদর্শকদের কাছে চিরঅম্লান।