সৃজনশীল চিত্রসম্পাদক-পরিচালক ও নাট্য নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল-এর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সৃজনশীল চিত্রসম্পাদক-পরিচালক এবং প্রামাণ্যচিত্র-প্রচারচিত্র ও নাট্য নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল-এর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
তিনি ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। মৃত্যু দিবস-এ, এই গুণি মানুষটির প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাই, তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
সাইদুল আনাম টুটুল ১৯৫২ সালের ১ এপ্রিল, পুরোনো ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭-তে মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে, উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। উচ্চমাধ্যমিকে থাকাবস্থায় চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন তিনি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি খুলনা অঞ্চলে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৭৪ সালে, আইসিসিআর বৃত্তি পেয়ে ভারতের পূণেতে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে, চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিষয়ে অধ্যয়ন করতে যান । ১৯৭৮-এ অধ্যয়ন শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
সাইদুল আনাম টুটুল চলচ্চিত্র সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন, ১৯৭৯ সালে শেখ নিয়ামত আলী ও মশিহউদ্দিন শাকের পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ ছবির মাধ্যমে। প্রথম ছবিতেই তিনি অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন এবং সম্পাদনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়াও তিনি আরো যেসব ছবি সম্পাদনা করেছেন তারমধ্যে- ঘুড্ডি, দহন, দীপু নাম্বার টু, দুখাই, অধিয়ার অন্যতম।
চলচ্চিত্র সম্পাদনার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র-নাটক-প্রামাণ্যচিত্র-প্রচারচিত্রও পরিচালনা করেছেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’ ২০০৩-এ মুক্তি পায়। ১৯৪৬-৪৭ সালের, বাংলার কৃষকদের তেভাগা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রটির কাহিনী আবর্তিত হয়। তাঁর এই চলচ্চিত্রটি সুধীমহলে অনেক প্রসংশিত ও সমাদৃত হয়। তিনি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি অণুদানে ‘কালবেলা’ নামে আরেকটি ছবিও পরিচালনা করছিলেন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপশি তিনি বাচসাস পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা – ‘দহন’ (ছবি’র জন্য ১৯৮৫) পুরস্কৃত হন। ২০০৪-এ চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পেয়েছেন ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার।
সাইদুল আনাম টুটুল নির্মিত নাটকসমূহের মধ্যে- নাল পিরান, বখাটে, আপন পর, নিশিকাব্য, হেলিকপ্টার, ৫২ গলির এক গলি, দায় মার সন্তানেরা, অপরাজিতা, মৃতের প্রত্যাবর্তন, শিউলিমালা, কুটে কাহার, গোবরা চোর প্রভৃতি। তিনি একজন সুঅভিনেতাও ছিলেন। এক সময় তিনি নায়কসহ বিভিন্ন চরিত্রে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন।
সাইদুল আনাম টুটুল ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও আজীবন সদস্য। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ও চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি চলচ্চিত্র ভাষা ও চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিষয়ে পাঠদান করাতেন।
প্রতিভাবান, মেধাবী ও সৃজনশীল চলচ্চিত্র সম্পাদক-পরিচালক হিসেবে বেশ সুনাম ছিল সাইদুল আনাম টুটুল-এর। প্রামাণ্যচিত্র-প্রচারচিত্র ও নাট্য নির্মাতা হিসেবে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি।
আমাদের স্বাধীনতার সূর্যসন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল আনাম টুটুল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ও শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে, যে উজ্জ্বল বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে গেছেন, তা চিরদিনই স্মরণযোগ্য।