সৃজনশীল চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নিয়ামত আলীর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। প্রয়াত এই গুণি চলচ্চিত্রকারের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
শেখ নিয়ামত আলী ১৯৩৯ সালের ৩০ এপ্রিল, কোলকাতার ২৪ পরগনার, সোনারপুর জেলার বেনিয়াবউ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ব পুরুষদের আদি বাড়ি ছিল খুলনার বাগেরহাট জেলায়।
১৯৫৬ সালে তিনি দক্ষিণ গড়িয়া যদুনাথ বিদ্যামন্দির থেকে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা পাস করেন। ১৯৬১ সালে ননকলেজিয়েট এক্সটার্নাল স্টুডেন্ট হিসেবে, কলাবিভাগ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৬৪ সালে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাস করেন।
১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসে তিনি কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত গুণি চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নিয়ামত আলী ১৯৭৯ সালে, নির্মাণ করেন (মসিহউদ্দিন শাকেরের সাথে যৌথভাবে) তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র-‘সূর্য দীঘল বাড়ী’। চলচ্চিত্রটি উপন্যাসিক আবু ইসহাক রচিত, ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়। এটিই বাংলাদেশে সরকারি অনুদানে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র । এই চলচ্চিত্রটি জার্মানির মানহাইম-হাইডেলবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং পর্তুগালের ফিগুএরা দা ফোজ চলচ্চিত্র উৎসব’সহ পাঁচটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করে। এছাড়াও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আটটি বিভাগে ও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কারের ছয়টি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রটি।
১৯৮৫ সালে, তাঁর নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘এস নিয়ামত আলী প্রডাকশন্স’ থেকে নির্মাণ করেন তাঁর নিজের কাহিনী ও চিত্রনাট্যে ‘দহন’ চলচ্চিত্রটি।
‘দহন’ শ্রেষ্ঠ পরিচালক’সহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তিনটি বিভাগে ও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কারের দশটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে।
১৯৯৫ সালে, আবার তাঁর প্রযোজনা সংস্থা থেকে নির্মাণ করেন ‘অন্য জীবন’। এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ পরিচালক’সহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এগারটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। শেখ নিয়ামত আলী একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন, যার নাম ‘রানী খালের সাঁকো’ ।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি- ‘জন পরিবহন’ ও ‘আমি নারী’ নামে ২টি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন।
এছাড়া তিনি টেলিভিশনের জন্য নাটকও পরিচালনা করেছেন। ১৯৯৬ সালে, বিটিভির জন্য নির্মাণ করেছিলেন দিলারা ডলি রচিত ‘শেষ দেখা শেষ নয়’ নাটকটি।
শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত চলচ্চিত্রে, তিনি যেসব শাখায় পুরস্কৃত হয়েছেন– জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ পরিচালক – সূর্য দীঘল বাড়ী (মসিহউদ্দিন শাকের-এর সাথে যৌথভাবে), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার – সূর্য দীঘল বাড়ী (মসিহউদ্দিন শাকের-এর সাথে যৌথভাবে)।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক-দহন, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার- দহন, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক-দহন, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার- দহন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (প্রযোজক)- অন্য জীবন, শ্রেষ্ঠ পরিচালক- অন্য জীবন, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- অন্য জীবন।
একজন প্রতিভাবান গুণি চলচ্চিত্রকার ছিলেন শেখ নিয়ামত আলী। তিনি এধারে পরিচালক, কাহিনী-চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ছিলেন। তাঁর নির্মিত সব চলচ্চিত্রই জীবনঘনিষ্ট উপাখ্যান। তিনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষ ও মানবতাবোধের উৎকৃষ্টতা তুলে ধরেছেন। একজন সৃজনশীল মেধাবী নির্মাতা হিসেবে তিনি সর্বজন প্রসংশিত।
খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার শেখ নিয়ামত আলী, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমলিন-চিরদিন।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন