বিশিষ্ট অভিনেতা, কাহিনীকার-চিত্রনাট্যকার-গীতিকার-প্রযোজক-পরিচালক, আলী মনসুর-এর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। প্রয়াত এই গুণিজনের প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আলী মনসুর ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের, ২৪ পরগনা জেলায়, জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মোঃ খোরশেদ আলী, তাঁর মায়ের নাম আঞ্জুমান আরা বেগম। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর ছোট ভাই আলী কওসার একজন অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক।
তাঁর স্ত্রী রাফিয়া মনসুর ছিলেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যপরিচালক।
আলী মনসুর ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে, কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন। কলকাতা আশুতোষ কলেজে পড়ার সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন তিনি। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর লেখা নাটক ‘পোড়োবাড়ী’, প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক কে ডি বাবুর পরিচালনায় রঙমহলে মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকের গানে কন্ঠ দিয়ে ছিলেন হেমন্ত মুখার্জী।
আলী মনসুর দেশবিভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসে তিনি, ঢাকা বেতারের নাট্য শিল্পী, অনুষ্ঠান ঘোষক এবং সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি তিনি মঞ্চনাটকের সাথে জড়িত থাকেন। ঢাকায় ‘কৃষ্টি সংঘ’ নামে একটি নাট্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই নাট্য সংগঠনে তখনকার অনেক নামি-দামি অভিনেতারা ছিলেন। তাদের মধ্যে- কাজী খালেক, ফতেহ লোহানী, ভবেস মুখার্জী, মালিক মনসুর ও আলী কওসার অন্যতম।
আলী মনসুর, নাটক রচনা-পরিচালনা ও নাটকে অভিনয়ও করতেন। সেই সময়ে তিনি, নাট্যকার-অভিনেতা ও নাট্যপরিচালক হিসেবে সূধী সমাজে সুপরিচিত ও খ্যাতিমান ছিলেন।
তাঁর রচিত নাটক গুলোর মধ্যে- পোড়োবাড়ী, কাশ্মীরী জাফরান, আমীর আকরাম, বোবা মানুষ , শেষ রাতের তারা, দুর্নিবার, হায়দার আলী, রাজদ্রোহী, ফিরে চল আপন ঘরে, কালো দিঘীর গাঁ এবং নিশি হলো ভোর অন্যতম।
আলী মনসুর, বাংলাদেশের প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অভিনেতা। আবদুল জব্বার খান পরিচালিত, ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত, ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবিতে তিনি একজন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। গাজী কালু চম্পাবতী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রাজাসন্যাসী, ভাই বোন’সহ তিনি আরো প্রায় অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন আলী মনসুর। ‘মহুয়া’ ও ‘জানাজানি’ নামের এই ছবি দুটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন তিনি।
তিনি যেসব ছবির কাহিনী, সংলাপ এবং চিএনাট্য রচনা করেছেন সেগুলো হলো- শাহজাদা সোলেমান, আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী, মহুয়া, জানাজানি, পলাশ ডাংগার মেয়ে, বধু মাতা কন্যা, ভাইবোন, রাজাসন্যাসী এবং গাঁয়ের বধূ প্রভৃতি।
দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে, আলী মনসুর পুরস্কৃতও হয়েছেন। তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার হিসেবে নিগার অ্যাওয়ার্ড, নাট্যকার হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং একুশে পদক লাভ করেছেন তিনি।
চলচ্চিত্র-নাট্যাঙ্গন তথা এদেশের শিল্প-সংস্কৃতির একজন পুরোধাব্যক্তিত্ব ছিলেন আলী মনসুর। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি তথা চলচ্চিত্র ইতিহাসে গুণি মানুষটি, অবশ্য-অবশ্যই স্মরণযোগ্য।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন