ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রত্ননিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গিয়ে ইত্যাদি ধারণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে খানজাহানের অসংখ্য কীর্তিশোভিত, সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ নগরী বাগেরহাটে।
মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দরে। পশুর নদীর তীরে জাহাজ, নদী এবং বন্দরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে নির্মিত মঞ্চে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি। মোংলা বন্দরে ধারণ হলেও দর্শকরা আসেন বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলাসহ খুলনা এবং নড়াইল থেকেও।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই রয়েছে বাগেরহাটকে নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। পরিবেশন করেছেন বাগেরহাটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছে সোহান, কণ্ঠ দিয়েছেন রাজীব, অয়ন চাকলাদার, তানজিনা রুমা ও এমেলী। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী। এবারে সংগীত পরিবেশন করেছেন বাগেরহাটেরই সন্তান জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাসির এবং প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী সানজিদা রিমি। কথা লিখেছেন কবির বকুল। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাস।
দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান বাগেরহাটকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৩ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন বাগেরহাটের জনপ্রিয় লোক বাদ্যযন্ত্র শিল্পী নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার ও তার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। মঞ্চে তারা দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে সুর তোলেন বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের জনপ্রিয় শিল্পীদের গাওয়া বেশ কয়েকটি শ্রোতাপ্রিয় গানের।
শেকড় সন্ধানী ইত্যাদি সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে বাগেরহাটের ওপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। সুন্দরবন, মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন দর্শনীয়, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ও প্রত্নসম্পদ এবং হজরত খানজাহানের অসংখ্য কীর্তিশোভিত স্থান ও স্থাপনার ওপর প্রতিবেদন।
এসব প্রতিবেদনের জন্য ইত্যাদির টিম মোংলা থেকে নদীপথে হিরণপয়েন্ট পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গমন করেন। বাগেরহাটের একদল নারী তাদের ব্যতিক্রমী চিন্তা আর কর্মসৃজনে ফেলনার সামগ্রী কাজে লাগিয়ে নানান উপকরণ তৈরি করার পাশাপাশি এখন তৈরি করছেন বিদেশে রপ্তানিযোগ্য মানুষের বসবাসের জন্য বাড়ি। তাদের ওপর রয়েছে একটি প্রতিবেদন। বাগেরহাটের ঢাংমারী গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই জীবিকার প্রধান উৎস সুন্দরবন। তবে মাঝে মাঝে বন সুরক্ষায় মাছ, গোলপাতা, মধুসহ বনজ সম্পদ সংগ্রহে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ক্ষুধার তাড়নায় সেই নিষিদ্ধ সময়েও কেউ কেউ সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। আর নানান ধরণের বিপদের সম্মুখীন হন, কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেন। তখন অসহায় হয়ে পড়ে তাদের পরিবার। এ বিষয়েই ইত্যাদির এবারের পর্বে রয়েছে একটি তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
বিদেশি প্রতিবেদন পর্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের উত্তর দিকে অবস্থিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ওপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন। প্রাকৃতিক যে সব বিস্ময় মানুষকে যুগে যুগে মুগ্ধ করেছে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তারই একটি।
তারিখ ও সময় সংক্রান্ত একটি অবাক করা ব্যতিক্রমধর্মী মনস্তাত্ত্বিক জাদু প্রদর্শন করেন জাদুকর ম্যাজিক রাজিক। চিঠিপত্র বিভাগে বাগেরহাটের এক ব্যতিক্রমী নারী উদ্যোক্তার জীবন সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়। এছাড়াও বাগেরহাটের মঞ্চে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক অসঙ্গতি ও সমাজ সংস্কারের ওপর রয়েছে বেশ কিছু তীক্ষ্ণ ও তীর্যক নাট্যাংশ। আত্মসংস্কার ও জাতিগত উন্নয়ন, মোসাহেবী সাহেব, ঘরে-বাইরে চারিদিকেই প্রেশার, ভাষা দিয়ে পেশা চেনা, ঋণখেলাপি ও আলাপী ভিক্ষুক, ঘুষ কথন, গ্রুপের প্রতি বিরূপ, চাটুকার এখন বিনয়ের অবতার, চোরের মায়ের বড় গলা এবং নানী-নাতিসহ বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।
এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-সোলায়মান খোকা, বাবুল আহমেদ, আব্দুল আজিজ, আবদুল্লাহ রানা, সুভাশিষ ভৌমিক, শবনম পারভীন, কাজী আসাদ, জিল্লুর রহমান, কামাল বায়েজিদ, জামিল হোসেন, মুকিত জাকারিয়া, আনোয়ার শাহী, আবু হেনা রনি, আনোয়ারুল আলম সজল, আনন্দ খালেদ, আমিন আজাদ, নজরুল ইসলাম, শাহেদ আলী, মামুনুল হক টুটু, ইকবাল হোসেন, জাহিদ শিকদার, বিলু বড়ুয়া, সিলভিয়া কুইয়া, মতিউর রহমান, বেলাল আহমেদ মুরাদ, তারিক স্বপন, সাদিয়া তানজিন, অশোক বড়ুয়া, সাবরিনা নিসা, সুর্বণা মজুমদার, সিয়াম নাসির, শামীম আহমেদ, নিপুসহ আরও অনেকে।
বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন। ইত্যাদির এই পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে আগামী শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।