English

26 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

দেশবরেণ্য সাহিত্যিক, সাংবাদিক সৈয়দ শামসুল হক-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

দেশবরেণ্য সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক, নাট্যকার, গীতিকবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক-কাহিনীকার সৈয়দ শামসুল হক-এর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। প্রয়াত এই বরেণ্য মানুষটির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ২৭ ডিসেম্বর, কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। আট ভাই-বোনের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন সবার বড়।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে, গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে বম্বে চলে যান সৈয়দ শামসুল হক। সেখানে বছর খানেকের বেশি সময় এক সিনেমা প্রডাকশন হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে, দেশে ফিরে এসে জগন্নাথ কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হন। কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু স্নাতক পাসের আগেই পড়াশোনার ইতি টানেন।
সৈয়দ শামসুল হকের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর রচিত প্রথম পদ্য তিনি লিখেছিলেন এগারো-বারো বছর বয়সে। টাইফয়েডে শয্যাশায়ী হয়ে তাঁর বাড়ির রান্নাঘরের পাশে সজনে গাছে একটি লাল টুকটুকে পাখি দেখে দুই লাইনের একটি পদ্য ‘আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/ তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে’ রচনা করেন।
সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায়। সেখানে ‘উদয়াস্ত’ নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে, তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত অন্যান্য উপন্যাসসমূহ- এক মহিলার ছবি, অনুপম দিন, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, স্মৃতিমেধ, স্তব্ধতার অনুবাদ, এক যুবকের ছায়াপথ, স্বপ্ন সংক্রান্ত, বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ (১ম খণ্ড, ২য় খণ্ড), বারো দিনের শিশু, বনবালা কিছু টাকা ধার নিয়েছিল, ত্রাহি, তুমি সেই তরবারী, কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন, শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, নির্বাসিতা, নিষিদ্ধ লোবান, খেলারাম খেলে যা, মেঘ ও মেশিন, ইহা মানুষ, মহাশূন্যে পরাণ মাষ্টার, দ্বিতীয় দিনের কাহিনী, বালিকার চন্দ্রযান, আয়না বিবির পালা ইত্যাদি।
তাঁর অন্যান্য রচনাসমূহ (ছোট গল্প)- তাস, শীত বিকেল, রক্তগোলাপ, আনন্দের মৃত্যু, প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান, সৈয়দ শামসুল হকের প্রেমের গল্প, জলেশ্বরীর গল্পগুলো, শ্রেষ্ঠ গল্প।
কবিতা- একদা এক রাজ্যে, বিরতিহীন উৎসব, বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা, প্রতিধ্বনিগণ, অপর পুরুষ, পরাণের গহীন ভিতর, নিজস্ব বিষয়, রজ্জুপথে চলেছি, বেজান শহরের জন্য কোরাস, এক আশ্চর্য সংগমের স্মৃতি, অগ্নি ও জলের কবিতা, কাননে কাননে তোমারই সন্ধানে, আমি জন্মগ্রহণ করিনি, তোরাপের ভাই, শ্রেষ্ঠ কবিতা, রাজনৈতিক কবিতা, নাভিমূলে ভস্মাধার কবিতা, সংগ্রহ প্রেমের কবিতা, ধ্বংস্তূপে কবি ও নগর।
কাব্যনাট্য- পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, গণনায়ক, নুরলদীনের সারাজীবন, এখানে এখন, কাব্যনাট্য সমগ্র।
এছাড়াও সৈয়দ শামসুল হক আরো লিখেছেন শিশুসাহিত্য, প্রবন্ধ, অনুবাদ ও আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে।
সৈয়দ শামসুল হক ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে, সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার সুবাদে, তিনি বিভিন্নভাবে জড়িয়ে পরেন চলচ্চিত্রের সাথে।
মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘মাটির পাহাড়’ চলচ্চিত্রের- কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ লিখেন এবং এ ছবির সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এভাবেই তিনি সরাসরি চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত হন। তাঁর অন্যান্য চলচ্চিত্র কর্ম- তোমার আমার (চিত্রনাট্য), সুতরাং (সংলাপ-গান), শীত বিকেল (কাহিনী-গান), রাজা এলো শহরে ( কাহিনী), ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো ( চিত্রনাট্য-পরিচালনা), কাগজের নৌকা (গান), আয়না (কাহিনী), নয়নতারা (সংলাপ), নতুন দিগন্ত (চিত্রনাট্য-সংলাপ- সহকারী পরিচালক), ময়না মতি (চিত্রনাট্য-সংলাপ-গান), অবাঞ্ছিত (চিত্রনাট্য), ক খ গ ঘ ঙ (সংলাপ), বিনিময় (কাহিনী-সংলাপ), অবুঝ মন (সংলাপ), মধুমিলন (কাহিনী-সংলাপ), কাঁচকাটা হীরে (চিত্রনাট্য), মাটির মায়া (কাহিনী-গান), অধিকার (চিত্রনাট্য), মান সম্মান (চিত্রনাট্য), পুরস্কার (চিত্রনাট্য), বড় ভাল লোক ছিল (কাহিনী-চিত্রনাট্য-সংলাপ-গান), অভিযান (কাহিনী- চিত্রনাট্য-সংলাপ), একজন সঙ্গে ছিল (কাহিনী), প্রভৃতি ছবিতে তিনি বিভিন্নভাবে কাজ করেছেন ।
তাঁর উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তৈরি করেন ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি।
এছাড়াও তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে, কর্ণফুলী বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মান করেন। ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও তিনি অনেক প্রামাণ্যচিত্র নির্মান করেছেন।
বেতার-টেলিভিশন অনুষ্ঠানের পরিচালক ও উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন সৈয়দ শামসুল হক।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ত্যাগ করে লন্ডন চলে যান তিনি, সেখানে বিবিসির বাংলা খবর পাঠক হিসেবে চাকুরি করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরটি পাঠ করেছিলেন তিনি । পরে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিবিসি বাংলার প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
ব্যক্তিজীবনে সৈয়দ শামসুল হক বিয়ে করেন লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হককে। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
সৈয়দ শামসুল হক তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মের স্বীকৃতিস্বরুপ পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। যারমধ্যে- বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত স্বর্ণপদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক, পদাবলী কবিতা পুরস্কার, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, টেনাশিনাস পদক, মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের সেরা সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম একজন তিনি। মেধাবী, সৃজনশীল, বহুমাত্রিক প্রতিভাবান লেখক সৈয়দ শামসুল হক। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, গান, সাংবাদিকতা, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় তাঁর সাবলীল পদচারণার জন্য তাঁকে ‘সব্যসাচী লেখক’ হিসেবে অবিহিত করা হয়।
সাহিত্যের সকল শাখায়ই তিনি তাঁর মেধার চুরান্ত স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় অনন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন, এই কৃতিমান পুরুষ সৈয়দ শামসুল হক।
গুণিজনেরা বলে গেছেন, কৃতিমানের মৃত্যু নেই। সৈয়দ শামসুল হকও তাই।
(তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট ও অনুপম হায়াৎ, ছবি- ফেসবুক থেকে নেয়া)

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন