দেশবরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ দেবু ভট্টাচার্য-এর ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৪ সালের ৩০ জুন, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। গুণি এই সঙ্গীতজ্ঞর প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাই।
দেবু ভট্টাচার্য (পারিবারিক নাম প্রাণকুমার ভট্টাচার্য) ১৯৩০ সালের ১ আগস্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতার আর্ট স্কুল থেকে চিত্রকলা বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর, নাচ-গান ও নাটকের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি বাঁশি বাজানোয় পারদর্শী ছিলেন।
দেবু ভট্টাচার্য ১৯৪৫ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ তিমিরবরণ পরিচালিত একটি অর্কেস্ট্রা গ্রুপের সদস্য হিসেবে। পরবর্তিতে তিনি গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
১৯৫০ সালে ভারতীয় ধ্রুপদী রাগে বাজানো তাঁর কয়েকটি বাঁশি সঙ্গীতের রেকর্ড বাজারে আসে। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে তিনি ধ্রুপদী, লোকসঙ্গীত ও আধুনিক ধারার সঙ্গীতে সুর করেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত অনেক কবির দেশপ্রেমমূলক কবিতারও সুর করেছেন। রুনা লায়লার কণ্ঠে দেশাত্ববোধক গান, “প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যের আগে” তাঁর এক অনন্য আসাধারন সৃষ্টি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানের উর্দু ও পাঞ্জাবী ছবির সংগীত পরিচালনা করে দেবু ভট্টাচার্য পুরো উপমহাদেশেই ছিলেন জনপ্রিয় ও সমাদৃত। দেবু ভট্টাচার্যের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশী ও পাকিস্তানি অনেক সঙ্গীতশিল্পী প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। তখনকার সময়ে তিনি উপমহাদেশে বাংলা সঙ্গীত ও সংস্কৃতিকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করে তোলেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেও সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন দেবু ভট্টাচার্য। তিনি যেসব চলচ্চিত্রে সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তারমধ্যে- চরিত্রহীন, বধু বিদায়, দম মারো দম, আশার আলো, উল্লেখযোগ্য।
তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ১৯৭৫ সালে ‘চরিত্রহীন’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাংলাদেশের সঙ্গীতে অনন্য অবদানের জন্য ১৯৯৭ সালে পান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ (মরণোত্তর)।
সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, গায়ক, সংগীত শিক্ষক দেবু ভট্টাচার্য। তিনি চলচ্চিত্রের গান, লোক সঙ্গীত ধ্রুপদী, রাগ, আধুনিক সব ধরণের গানই করেছেন সমানভাবে। গীটার, কীবোর্ড, পিয়ানো, বেহালা, বাঁশি এসব বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন অনায়াসে। একজন উচুমানের সঙ্গীত বিশারদ ছিলেন তিনি, গানের প্রতিটি শাখায় রেখে গেছেন ধ্রুপদী ছোঁয়া। সুমধুর সুরের কারণে তাঁর অনেক গানই হয়েছে জনপ্রিয়, পেয়েছে কালজয়ীর সম্মান। যা এখনও দর্শক-শ্রোতাদেরকে বিমোহিত করে, উদ্বেলিত করে।
বাংলাদেশের সঙ্গীতের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছেন দেশবরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ দেবু ভট্টাচার্য, তাঁর সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে তিনি বেঁচে থাকবেন- যুগের পর যুগ ধরে।