দেশবরেণ্য কন্ঠশিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগম-এর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৪ সালের ২৯ মে, ঢাকায় ইন্তেকাল করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। জনপ্রিয় গুণি এই সঙ্গীতশিল্পীর প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আঞ্জুমান আরা বেগম ১৯৪২ সালের ১১ জানুয়ারি, বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা শহীদ ডাঃ মোহাম্মদ কসিরউদ্দিন তালুকদার, বগুড়া লোকাল বোর্ড এবং ডিষ্ট্রিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ও চিকিৎসক ছিলেন, তাঁর মাতা মোসামৎ সৈয়দা জিয়াউন নাহার বেগম, বগুড়ার জেল ভিজিটর, মিউনিসিপ্যাল কমিশনার, গার্লস গাইড কমিশনার, নারী পুনর্বাসন সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন)।
আঞ্জুমান আরা বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁরা ছিলেন ৫ বোন এবং ২ ভাই। তাঁর বড় বোন জেব-উন-নেসা জামাল একজন খ্যাতিমান গীতিকার ছিলেন এবং আরেক বোন মাহবুব আরা বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পী ছিলেন। সঙ্গীতশিল্পী জিনাত রেহানা তাঁর ভাগ্নি এবং উপমহাদেশের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী রুনা লায়লা তাঁর চাচাতো বোন।
আঞ্জুমান আরা বেগম পঞ্চাশের দশক থেকেই রেডিওতে গান গেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি সর্বপ্রথম ‘হারানো দিন’ ছবিতে মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নেপথ্য কন্ঠ শিল্পী হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন। মুস্তাফিজ পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬১ সালে।
তিনি আরো যেসব চলচ্চিত্রে নেপথ্যকন্ঠ দিয়েছেন সেগুলো হলো- জোয়ার এলো, দুই দিগন্ত, নতুন সুর, চান্দা, সুতরাং, আয়না ও অবশিষ্ট, আবির্ভাব, এইতো জীবন, নাচঘর, একালের রূপকথা, উজালা, তালাশ, আখেরী স্টেশন, আনোয়ারা, জানাজানি, কার বউ, চাওয়া পাওয়া, কাগজের নৌকা, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, ম্যায় ভী ইনসান হুঁ, নয়নতারা, মলুয়া, আলীবাবা, বন্ধন, মেঘ ভাংগা রোদ, ঘূর্ণিঝড়, বাঁশরী, আপন পর, বেদের মেয়ে, মাসুদ রানা, বাদী থেকে বেগম, অভিশাপ, অঙ্গার, নতুন পৃথিবী, বদলা, চন্দ্রলেখা, প্রতিজ্ঞা, ইত্যাদি।
আঞ্জুমান আরা বেগমের গাওয়া জনপ্রিয় কালজয়ী কিছু গানের মধ্যে আছে- আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল…., এমন মজা হয়না গায়ে সোনার গয়না….., তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে ভাল, বাসবে ওগো শুধু মোরে….,
কে স্মরণের প্রান্তরে চুপি চুপি দোলা দিয়ে যায়….., সাতটি রঙের মাঝে আমি মিল খুঁজে না পাই…..,
খোকন সোনা বলি শোন…….,
মাছরাঙা পাখিটা আয় আয়…., প্রভৃতি।
আঞ্জুমান আরা বেগম ১৯৬৪ সালে টেলিভিশন সম্প্রচারের শুরু থেকেই গান গাওয়া শুরু করেন এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মূলত ষাটের দশকে থেকেই তিনি সংগীত শিল্পী হিসেবে প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তখন রেডিও, টেলিভিশন বা গ্রামোফোন রেকর্ডে তাঁর সুমধুর কণ্ঠের গাওয়া গান শ্রোতাদের বিমোহিত করত।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১৯৬২ সালে, মাসুদ আলম সিদ্দিকীর সংগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পুত্র তারিক মাশরুর ‘দ্য ডেইলি স্টারে’র উপ-সম্পাদক এবং কন্যা উমানা এ্যাঞ্জেলিন ‘এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি’র লেকচারার।
আঞ্জুমান আরা বেগম তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০০২ সালে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী’ তাকে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করে। ২০০৩ সালে তিনি ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন কর্তৃক নানা পুরস্কার ও সম্মাননা পান।
একজন অসাধরণ মেধাবী ও গুণী কণ্ঠশিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগম। অসংখ্য শ্রুতিমধুর কালজয়ী জনপ্রিয় গানের কণ্ঠশিল্পী তিনি । তাঁর গাওয়া গানের আবেদন আজীবনই আমাদের প্রাণে বাজবে। ;…. স্মরণের প্রান্তরে চুপি চুপি দোলা… দিয়ে যাবে অনন্তকাল।