এ কে আজাদ: গোলাম সারওয়ার। সাংবাদিক। লেখক-গীতিকার। বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের দেশের পত্রিকা জগতের অনেক নব নব ধারার সৃষ্টি করেছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর হাতে গড়া অনেক সাংবাদিকই এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
একজন সাংবাদিক হয়েও, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে, স্বাধীন করতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন । দেশপ্রেমিক প্রথিতযশা সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার এর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট, চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। প্রয়াত এই গুণি মানুষটির স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
গোলাম সারওয়ার ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল, বরিশাল জেলার বানারীপাড়ায়, জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, স্নাতকোত্তর (বাংলায়) ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬৩ সালে ‘দৈনিক পয়গম’-এ যোগ দিয়ে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন গোলাম সারওয়ার । এরপরে ‘দৈনিক সংবাদ’-এ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন’-এ কিছুদিন প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এ সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। দৈনিক ইত্তেফাক-এ প্রধান সহ-সম্পাদক, যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ দুই যুগ। ছিলেন সাপ্তাহিক পূর্বাণী’র নির্বাহী সম্পাদকও ।
দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘দৈনিক যুগান্তর’, তিনি হন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। দৈনিক সমকাল প্রতিষ্ঠা করেন ২০০৫ সালে । মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত গোলাম সারওয়ার ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্নভাবে জড়িত ছিলেন চলচ্চিত্রের সাথেও। বাজিমাৎ, বউ কথা কও, যদি জানতেম, দাতা হাতেম তাই, রাজকুমারী চন্দ্রভান, ভাগ্যবতি’সহ বেশকিছু ছবির জন্য গান লিখেছেন গোলাম সারওয়ার।
ওবায়েদ-উল হক পরিচালিত ‘দুই দিগন্ত’ ছবির সাথেও জড়িত ছিলেন তিনি।
গোলাম সারওয়ার লেখালেখিতেও সুনাম অর্জন করেছেন । তাঁর প্রকাশিত গন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- রঙিন বেলুন (ছড়াগ্রন্থ) এবং প্রবন্ধ সংকলন- সম্পাদকের জবানবন্দি, অমিয় গরল, আমার যত কথা, স্বপ্ন বেঁচে থাক ।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গোলাম সারওয়ার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার’সহ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃকও পেয়েছেন সম্মাননা।
সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ২০১৪ সালে, একুশে পদকে ভূষিত হন । ২০১৬ সালে, কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৭ সালে, আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন তিনি।
গোলাম সারওয়ার সম্পাদকদের সংগঠন, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ছিলেন ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের আপিল বিভাগের সদস্য । একাধিকবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালক ছিলেন। বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির আজীবন সদস্য তিনি। রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তরা হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক-লেখক ও গীতিকার গোলাম সারওয়ার। তাঁকে অনেকেই সাংবাদিকদের শিক্ষক হিসেবে অভিহিত করেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর হাতে গড়া অনেক সাংবাদিকই এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের দেশের পত্রিকা জগতের অনেক নব নব ধারার সৃষ্টি করেছেন তিনি।
একজন সাংবাদিক হয়েও, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে, স্বাধীন করতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন । একজন দেশপ্রেমিক এবং এদেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক হিসেবে মানুষ তাঁকে বহুকাল মনে রাখবে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের জগতে গোলাম সারওয়ারের অনন্য অবদান, অবশ্যই ইতিহাস হয়ে থাকবে।