আজাদ আবুল কাশেম: আদিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম সুদর্শন খলনায়ক। খল বা ভিলেন চরিত্রে দুর্দান্ত একজন অভিনেতা ছিলেন তিনি। ভিলেন হলেও তাঁর অভিনয় স্টাইল ছিল নায়কোচিত। দুই-তিনটি ছবিতে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে ভালোই অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে খলনায়ক হিসেবেই সিনেমা পর্দায় সর্বাধিক সফলতা পেয়েছেন, পেয়েছেন জনপ্রিয়তা।
অসংখ্য হিট-সুপারহিট ছবির, দর্শকপ্রিয় অভিনেতা খলনায়ক আদিল-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর, নারায়ণগঞ্জে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। প্রয়াত এই অভিনেতার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
অভিনেতা আদিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট, নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম এ কে এম রেজাউল করিম ভূঁইয়া। তাঁর বাবার নাম তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া, মা সেরাজুননেসা। ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন তিনি। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স (এম এ, এলএলবি-সহ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
আদিল ছাত্রজীবনে মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন এবং টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন। ১৯৭১-এ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের পর তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি- ‘এখানে আকাশ নীল’, হাসমত পরিচালিত ছবিটি মুক্তিপায় ১৯৭৩ সালে। আদিল অভিনীত অন্যান্য ছবির মধ্যে আছে- অনুভব, ডুমুরের ফুল, শীষনাগ, রাজমহল, যদি জানতেম, রাজদুলারী, মোকাবেলা, বারুদ, বন্দুক, বুলবুল-এ বাগদাদ, ঈমান, চন্দ্রলেখা, যাদু নগর, দিন যায় কথা থাকে, ওয়াদা, আমীর ফকির, তাজ ও তলোয়ার, সওদাগর, পদ্মাবতী, গাঁয়ের ছেলে, বাহাদুর, নাগ নাগিনী, আবেহায়াত, শাহীচোর, নতুন পৃথিবী, ঘরের বউ, নসীব, উছিলা, নেপালী মেয়ে, সেলিম জাভেদ, ঈমানদার, সোহাগ মিলন, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, আশার আলো, রাজকুমারী, হাতি আমার সাথী, দুই জীবন, আলোমতি প্রেমকুমার, তিন টেক্কা, সাজানো বাগান, গুনাহ, পাতাল বিজয়, নাগিনী কন্যা, তিন বাহাদুর, শাহী দরবার, রাজিয়া সুলতানা, গীত, আলিফ লায়লা, অশান্তি, চাঁদ সওদাগর, মহারাণী, বাহাদুর মেয়ে, তুফান মেইল, দিদার, চাচ্চু, পিতার আসন, দুশমন খতম, পাওয়ার, কোটি টাকার কাবিন, ইত্যাদি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম সুদর্শন খলনায়ক, রোমান্টিক খলনায়কও বলা যেতে পারে তাঁকে। খল বা ভিলেন চরিত্রে দুর্দান্ত একজন অভিনেতা ছিলেন তিনি।
ভিলেন হলেও তাঁর অভিনয় স্টাইল ছিল নায়কোচিত। আর এসব কারনেই নির্মাতারা আদিলকে নায়ক করেও ছবি বানিয়েছেন। দুই-তিনটি ছবিতে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে ভালোই অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে খলনায়ক হিসেবেই সিনেমা পর্দায় সর্বাধিক সফলতা পেয়েছেন, পেয়েছেন জনপ্রিয়তাও। অসংখ্য হিট-সুপারহিট ছবির দর্শকপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্রে তাঁর সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা থাকা সত্যেও, জাঁদরেল খলঅভিনেতা আদিল একসময় চলচ্চিত্র থেকে দূরে চলে যান। আইনজীবী হিসেবে ব্যস্ত হয়ে পরেন। শেষ জীবনে কোর্ট-কাচাড়িতেই ব্যস্তসময় কেটেছে তাঁর ।
বাংলাদেশের সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্রের প্রতিভাবান মেধাবী অভিনেতা, সিনেমাদর্শকদের প্রিয় অভিনেতা, আদিল আজ অনন্তলোকের যাত্রী। অনন্তলোকে তিনি ভালো থাকুন। তাঁর বিদেহী আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক- সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনা করি।