এ কে আজাদ: দিলদার। অভিনেতা। দর্শকপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা।বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সেরা কৌতুক অভিনেতাদের অন্যতম একজন ছিলেন তিনি। নিখুত অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমা পর্দায় সবচেয়ে বেশি হাস্যরস ফুটিয়ে তোলায় ছিলেন পারদর্শি। এক সময়ে দর্শকদের অতিপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে, বক্সঅফিসে নিজের চাহিদাকে ‘স্টার’ পর্যায়ে উন্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। দর্শক জনপ্রিয়তা এতোটাই আকাশচুম্বী হয়ে ওঠেছিল যে, দিলদারকে নায়ক করেই নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি ছবি। তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন নূতন।
বাংলাদেশের সিনেমাপর্দা হাসির বন্যায় ভাসিয়েছেন যিনি, সেই দর্শকপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা দিলদার-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৮ বছর। মৃত্যুদিবসে এই অভিনেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
জনপ্রিয় অভিনেতা দিলদার (দিলদার হোসেন) ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারী, চাঁদপুরে জেলার শাহতলী গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এসএসসি পাস করার পর, আর লেখা-পড়া করেননি। চাকরি করতেন হোটেল পূর্বাণীতে, এখানেই দেখা হয় আরেক গুণি অভিনেতা অমল বোস-এর সাথে, আর অমল বোসই তাঁকে নিয়ে আসেন চলচ্চিত্রে।
দিলদার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র, অমল বোস পরিচালিত ‘কেন এমন হয়’ মুক্তিপায় ১৯৭৫ সালে। পরবর্তিতে তিনি আরো অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেন, তারমধ্যে- দুস্য বনহুর, যাদুর বাঁশী, জয় পরাজয়, আসামী, শাহজাদা, জবাব, অংশীদার, দোস্তী, টক্কর, উজান ভাটি, গাঁয়ের ছেলে, সোহাগ মিলন, ওমর শরীফ, কোরবানি, সোনার তরী, নবাবজাদী, সুখের সংসার, জনতা এক্সপ্রেস, নাগ নাগিনী, লাইলী মজনু, নাগপুর্নিমা, সি আই ডি, বিদ্রোহী, মহানায়ক, তাসের ঘর, প্রতিহিংসা, অস্বীকার, লড়াকু, ওগো বিদেশিনী, যন্ত্রণা, মীমাংসা, অপেক্ষা, আওয়াজ, ভেজাচোখ, বেদের মেয়ে জোসনা, আপন দুলাল, দুখিনী বধূ ও শয়তান যাদুকর, মৃত্যুর মুখে, বিক্ষোভ, অন্তরে অন্তরে, দাঙ্গা, লক্ষ্মীর সংসার, পাগল মন, নয়ালায়লা নয়ামজনু, দোলনা, কন্যাদান, চাওয়া থেকে পাওয়া, সুন্দর আলী, জীবন সংসার, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, শান্ত কেন মাস্তান, গাড়িয়াল ভাই, মনে পরে তোমাকে, বীর সৈনিক, কুখ্যাত খুনী, কুলি, ডন, অচিন দেশের রাজকুমার, প্রেম যমুনা, নীল সাগরের তীরে, বাঁশিওয়ালা, আব্দুল্লাহ, বীর পুরুষ, নিষ্ঠুর, দূর্জয়, স্বপ্নের পৃথিবী, এই ঘর এই সংসার, তেজী, প্রিয়জন, বিচার হবে, কালুগুন্ডা, শুধু তুমি, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, শান্ত কেন মাস্তান, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, তুমি কি সেই, বিষেভরা নাগিন, নাচনেওয়ালী, খাইরুন সুন্দরী, প্রিয়জন, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, তুমি শুধু আমার, প্রেমের জ্বালা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
দিলদার শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ২০০৩ সালে, ‘তুমি শুধু আমার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য।
ব্যক্তিজীবনে দিলদার রোকেয়া বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার (দাঁতের ডাক্তার), ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সেরা কৌতুক অভিনেতাদের অন্যতম একজন ছিলেন, দিলদার। নিখুত অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমা পর্দায় সবচেয়ে বেশি হাস্যরস ফুটিয়ে তোলায় পারদর্শি অভিনেতা ছিলেন তিনি। একসময়ে কৌতুক অভিনয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান নেন তিনি। দর্শকদের অতিপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে, বক্সঅফিসে নিজের চাহিদাকে ‘স্টার’ পর্যায়ে উন্নিত করতে সক্ষম হন। হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌতুক অভিনেতা। এমন একসময় গেছে যে, কোনো কোনো ছবির স্ক্রিপ্ট শুধু তাঁর জন্য আলাদা ভাবে লেখা হত। দর্শকদের চাহিদার কথা চিন্তা করে চিত্রপরিচালকরা বেশিরভাগ সিনেমায় চাইতেন, দিলদারকে। এমনও সময় গেছে বছরে তাঁর ৪০/৪২ টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। দর্শক জনপ্রিয়তা এতোটাই আকাশচুম্বী হয়ে ওঠেছিল যে, কিছু কিছু ছবি শুধুমাত্র তাঁর জন্যই ব্যবসায়ীকভাবে উৎরে গেছে।
কৌতুক অভিনয়ে জনপ্রিয়তার সকল রেকর্ড ভঙ্গ করা দিলদারকে নায়ক করেই নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি ছবি। তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন নূতন। ছবির পরিচালক ছিলেন প্রয়াত তোজাম্মেল হক বকুল। ‘আব্দুল্লাহ’ ছবিটি যেমন জনপ্রিয়তা পায়, তেমনি ব্যবসায়ীকভাবেও সফল হয়।
বাংলাদেশের সিনেমাপর্দা হাসির বন্যায় ভাসিয়ে, কৌতুক অভিনয়কে সমৃদ্ধ করেছেন যিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে অনন্য অবদান রেখেগেছেন যিনি। সেই অসম্ভব জনপ্রিয় অভিনেতাকে, আনন্দময় মানুষটিকে, অনন্ত অভিবাদন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরঅম্লান- কিংবদন্তিতুল্য কৌতুক অভিনেতা দিলদার।