আজাদ আবুল কাশেম: জনপ্রিয় সুরকার-সঙ্গীতপরিচালক ফরিদ আহমেদ এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। মৃত্যুদিবসে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
ফরিদ আহমেদ ১৯৬০ সালের ৩ অক্টোবর, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার হরিনহাটি গ্রামে। তিনি লেখাপড়া করেছেন তীতুমীর কলেজে।
ছোটবেলা থেকেই গান-বাজনার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ থাকায়, স্কুলবন্ধু বায়েজীদের কাছে গিটার বাজানো শিখেন ফরিদ আহমেদ। কণ্ঠশিল্পী ফিরোজ সাঁইয়ের সহায়তায় ‘স্পন্দন’ ব্যান্ড-এ একজন গীটারিস্ট হিসেবে সঙ্গীতজগতে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে কীবোর্ড বাদক ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর।
লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা ও কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘তুমি ছাড়া আমি যেন মরুভূমি’ গানে সুর করে ব্যাপক পরিচিতি পান ফরিদ আহমেদ। সুরকার হিসেবে হন জনপ্রিয় ও প্রশংসিত । এরপর থেকে বহু জনপ্রিয় গানের সুর তৈরি করেছেন তিনি। করেছেন সংগীতায়োজনও।
তাঁর সুরে বিভিন্ন শিল্পীদের গাওয়া অনেক অডিও ক্যাসেট বেরিয়েছে।
ফরিদ আহমেদের সুর করা জনপ্রিয় ও আলোচিত গানের মধ্যে রয়েছে- বিটিভির ‘ইত্যাদি’ ম্যাগাজিনের টাইটেল সং ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি’, কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘মনেরই রাগ অনুরাগ’, রুনা লায়লার ‘ফেরারী সাইরেন’, রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠে ‘দলছুট প্রজাপতি’, চ্যানেল আইয়ের ‘আজ জন্মদিন’, ‘ক্ষুদে গানরাজ’, ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’, সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগিতার থিম সং, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে ‘তুমি আমার জীবনের গহিনে’ প্রভৃতি।
অডিও শিল্পের পাশাপাশি টিভিনাটক ও চলচ্চিত্রেও ফরিদ আহমেদ সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এরমধ্যে নাটকের কাজই বেশী। তিনি প্রায় আড়াই হাজার খণ্ড নাটক এবং চার শতাধিক ধারাবাহিক নাটকের সংগীত পরিচালনা করেছেন।
চলচ্চিত্রে তিনি, বিখ্যাত সংগীত পরিচালক আলম খান এর সাথে সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, নূর হোসেন বলাই পরিচালিত ‘নিস্পত্তি’ চলচ্চিত্রে প্রথম সংগীত পরিচালনা করেন ফরিদ আহমেদ। এরপরে তিনি ‘যত প্রেম তত জ্বালা’, ‘গহীনে শব্দ’, ‘তুমি রবে নীরবে’সহ আরো বেশকিছু ছবির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন ।
২০১৭ সালে সংগীতপরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ফরিদ আহমেদ। ‘তুমি রবে নীরবে’ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনার জন্য এ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
একজন গুণী সংগীতপরিচালক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন ফরিদ আহমেদ। বাংলাদেশের সংগীতে তাঁর অবদান অনিস্বীকার্য।