English

24 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

চিত্রনায়ক মিঠুন-এর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: চিত্রনায়ক মিঠুন-এর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০১৫ সালের ২৪ মে (২৪ মে রাত ২টার দিকে), ভারতের কোলকাতায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায়, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।

চিত্রনায়ক মিঠুন (শেখ আবুল কাশেম মিঠুন) ১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিল, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার দরগাঁহপুর গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ আবুল হোসেন ও মা হাফেজা খাতুন। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ১৯৬৯ সালে দরগাহপুর হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর চলে আসেন খুলনায়। এখানে এসে ভর্তি হন খুলনা সিটি কলেজে, এখান থেকে এইচ.এস.সি পাস করে পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেন।

স্কুল জীবন থেকেই টুকটাক লেখালেখির অভ্যাস ছিল তাঁর। এরপর খুলনা সিটি কলেজে পড়াকালীন তাঁর উপর দায়িত্ব আসে কলেজের দেয়াল পত্রিকা ‘সঙ্গোপন’ সম্পাদনার। এ সময় তিনি খুলনা থেকে প্রকাশিত কালান্তর, জন্মভূমি, পূর্বাঞ্চল, প্রবাসী প্রভৃতি পত্রিকায় গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকলীন সময়েই তিনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পুরোপুরিভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৪ সালে মিঠুন খুলনা বেতার কেন্দ্রের গীতিকার ও নাট্যকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে খুলনায় টেলিভিশন উপকেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, তাঁর রচনায় গান ও গীতি নকশা প্রচারিত হয়।

মিঠুন ১৯৭৮ সালে ‘সাপ্তাহিক কালান্তর’ পত্রিকার মাধ্যমে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ‘কালান্তর’-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি ‘সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ’র সাহিত্য পাতার সম্পাদনা করতেন ও এক সময় ‘দৈনিক আবর্ত’ পত্রিকার সহ-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।

দেখতে বেশ সুদর্শন ছিলেন মিঠুন । সংবাদ সংগ্রহের কাজে এফডিসিতে গেলে তখনকার কোনো কোনো চিত্রপরিচালক তাদের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। সে প্রস্তাব তৎক্ষণাত গ্রহণ না করলেও, সম্ভবত সেখান থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায়।

১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বজলুর রহমান পরিচালিত ‘তরুলতা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন মিঠুন। এই ছবির জন্য গানও লিখেন তিনি। মিঠুন অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে- ঈদ মোবারক, নরম গরম, মাসুম, প্রমাণ, চ্যালেন্জ, দিদার, শেষ পরিচয়, দস্যুরাণী ফুলন দেবী, নিকাহ, সাক্ষাৎ, কুসুমকলি, চন্দনা ডাকু, স্যারেন্ডার, ভেজা চোখ, বউ শ্বাশুড়ী, ভাগ্যবতী, বেদের মেয়ে জোসনা, প্রেম প্রতিজ্ঞা, চাকর, জিদ, ত্যাগ, গৃহলক্ষ্মী, বিরাজ বৌ, স্বর্গ নরক, কসম, গাড়িয়াল ভাই, রঙ্গিলা, অর্জন, বাদশাহ ভাই, নিঃস্বার্থ, খোঁজ-খবর, হুশিয়ার, চাঁদের হাসি, শাস্তির বদলে শাস্তি, জীবনসঙ্গী, মহান বন্ধু, ছোবল, সবার উপরে মা, জেলহাজত, ত্যাজ্যপুত্র, শাস্তির বদলে শাস্তি, মুন্না মাস্তান, বাঘিনী কন্যা, এ জীবন তোমার আমার, বাবা কেন চাকর, ম্যাডাম ফুলি, ইত্যাদি ।

নায়ক মিঠুন চলচ্চিত্রের কাহিনী, গীতিকার ও চিত্রনাট্যের রচয়িতাও ছিলেন। তিনি যেসব চলচ্চিত্রের কাহিনী- চিত্রনাট্য লিখেছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঈদ মোবারক, জিপসী সর্দার, প্রেম প্রতিজ্ঞা, কুসুমকলি, মাসুম, অন্ধবধূ, শেষ পরিচয়, স্বর্গ-নরক, চাকর, দিদার, কসম, পরিবর্তন, বিধাতা, কালনাগিনীর প্রেম, দুস্য ফুলন, জেল হাজত, ত্যাজ্যপুত্র, প্রভৃতি।

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বও দিয়েছেন নায়ক মিঠুন। ১৯৮৯-৯০ সালে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন, ১৯৯৩-৯৪’সালের নির্বাচনে শিল্পী সমিতির আন্তর্জাতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র লেখক সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তার সহসভাপতি নির্বাচিত হন, ২০০১ সালে চলচ্চিত্র লেখক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি এবং ২০০২ সালে চলচ্চিত্র জগতের সকল সংগঠন মিলে ‘ফিল্ম ফেডারেশন’ গঠিত হলে তিনি তার সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০০ সালের পর মিঠুন অভিনয় থেকে দূরে সড়ে আসেন। তবে তিনি স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। ‘দীগন্ত’ টেলিভিশনে শিশুদের নিয়ে তিনি অনুষ্ঠান করতেন, এই অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

নিজ এলাকার আঞ্চলিক ভাষায় ‘আমরাই’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন মিঠুন, যেটি ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির নেতৃত্বঃ সংকট ও সংঘাত’ প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে।

চিত্রনায়ক মিঠুন ব্যক্তিজীবনে, পারভিন আক্তারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সঙ্গীতা ও তরী নামে তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।

বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন চিত্রনায়ক মিঠুন। অভিনয় করা, চলচ্চিত্রের কাহিনী লিখা, গান ও গল্প-কবিতা লিখা সমান তালে চালিয়ে গেছেন তিনি। অনেক ভালো ভালো ছবির কাহিনী লিখেছেন। তাঁর কাহিনীতে নির্মিত হয়েছে অনেক ব্যবসাসফল ছবি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে মাত্র দুয়েকটি ছবিতে একক নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন মিঠুন। তবে দ্বিতীয় বা সহনায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়। এক সময় দ্বিতীয় বা সহনায়ক হিসেবে, পরিচালকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনি। এসব চরিত্রে খুব ভালো অভিনয় করতেন, জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন