আজাদ আবুল কাশেম: গুণী অভিনেতা আখতার হোসেন-এর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৮ সালের ৪ আগস্ট, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। প্রয়াত এই গুণী অভিনেতার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আখতার হোসেন ১৯৩৩ সালের ২৬ অক্টোবর, মানিকগঞ্জ জেলায়, জন্মগ্রহন করেন। বাবার নাম খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান। ঢাকার আরমানিটোলা হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করে, পরবর্তীতে স্যার সলিমুল্যাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ থাকা আখতার হোসেনের আর ডাক্তার হওয়া হলো না। তিনি মঞ্চনাটকের সাথে জড়িয়ে যান এবং নিয়মিত অভিনয় করতে থাকেন। মঞ্চ থেকে পরবর্তিতে বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি ।
আখতার হোসেন প্রথম ‘আপ্যায়ন’ (১৯৫৪) নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ মুক্তিপায় ১৯৬১ সালে। নায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ‘কাগজের নৌকা’ মুক্তিপায় ১৯৬৬ সালে, পরিচালক সুভাষ দত্ত । এই ছবিতে তাঁর নায়িকা ছিলেন সুচন্দা। এরপর তিনি আরো যেসব ছবিতে অভিনয় করেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- তালাশ, রাজা এলো শহরে, গুনাই বিবি, মহুয়া, অপরিচিতা, গাজীকালু চম্পাবতী, ভানুমতী, ঘূর্ণিঝড়, নিজেরে হারায়ে খুঁজি, ছন্দ হারিয়ে গেলো, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, দুরন্ত দুর্বার, আলোর মিছিল, নয়ন মনি, সূর্যগ্রহণ, জননী, অমর প্রেম, তৃষ্ণা, যাদুর বাঁশী, অনুভব, ফকির মজনু শাহ, অশিক্ষিত, বিজয়িনী সোনাভান, দি ফাদার, আমির ফকির, মাটির ঘর, সুন্দরী, এতিম, জীবন মৃত্যু, সুখের সংসার, বাঁধনহারা, মাটির পুতুল, কুদরত, অংগার, ঈমান, সুখে থাকো, মাসুম, লাল সবুজের পালা, ঘর জামাই, উজান ভাটি, লালকাজল, পুরস্কার, সময় কথা বলে, প্রতিহিংসা, মেহমান, মাটির কুলে, অভিযান, ভাতদে, নয়নের আলো, মান অভিমান, মিস লোলিতা, রঙিন গুনাই বিবি, মীমাংসা, অভাগী, সারেন্ডার, জিনের বাদশা, চোরের বউ, ত্রাস, রঙিন নয়নমনি, ঘাত প্রতিঘাত, প্রভৃতি।
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনেরও একজন নিয়মিত এবং জনপ্রিয় নাট্যশিল্পী ছিলেন আখতার হোসেন।
প্রথম দিকে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করলেও, আখতার হোসেন পরবর্তিতে বিভিন্ন ছবিতে খলচরিত্রসহ নানাবিধ চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই গুণি অভিনেতা। একজন উচুমানের চরিত্রাভিনেতা ছিলেন তিনি।
বিভিন্ন ছবিতে নানা ধরণের চরিত্রে অভিনয় করে, একজন ভালো অভিনেতা হিসেবে দক্ষতা দেখিয়েছেন সব ছবিতেই। অনেক চলচ্চিত্রেই তিনি ভিন্ন ভিন্ন গুরত্বপূর্ণ চরিত্রেও অভিনয় করেছেন এবং একজন গুণি অভিনেতা হিসেবে দর্শকমহলে প্রসংশিত হয়েছেন, জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
যাদের অভিনয় প্রতিভায় সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, অভিনেতা আখতার হোসেন তাদেরই অন্যতম একজন । লক্ষ-কোটি ভক্ত-দর্শকদের হৃদয়ে আখতার হোসেন-এর মতো অভিনেতা, অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।