খ্যাতিমান চলচ্চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক রফিকুল বারী চৌধুরী’র ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৫ সালের ৮ মে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। প্রয়াত এই গুণী চলচ্চিত্রব্যক্তিত্বের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
রফিকুল বারী চৌধুরী ১৯৩০ সালে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়, জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালের দিকে, ভারতের বোম্বে, পাকিস্তানের লাহোর এবং করাচির ফিল্ম স্টুডিওতে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে, সিনিয়র লাইটম্যান হিসেবে এফডিসিতে যোগ দেন। পরবর্তিতে হন চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক।
১৯৬৪ সালে, পিটিভি (বর্তমানে বিটিভি) ঢাকা এবং লাহোর কেন্দ্র, একই দিনে সম্প্রচার শুরু করে। উপমহাদেশের প্রথম এই টেলিভিশন কেন্দ্রের, প্রথম দিনের তিনজন ক্যামেরাম্যানের একজন ছিলেন রফিকুল বারী চৌধুরী।
চিত্রগ্রাহক হিসেবে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র এস,এম,শফি পরিচালিত ‘ইয়ে ভি এক কাহানী’ মুক্তিপায় ১৯৬৪ সালে। চিত্রগ্রাহক হিসেবে তিনি আরো যেসব ছবিতে কাজ করেছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- কাঞ্চন মালা, ম্যায় ভি ইনসান হু, কাঁচ কাটা হীরে, আয়না ও অবশিষ্ট, নিশি হলো ভোর, দীপ নেভে নাই, বড় বাড়ির মেয়ে, চম্পাকলি, জয়বাংলা, ছন্দ হারিয়ে গেল, আলোর মিছিল, লাঠিয়াল, তৃষ্ণা, নয়নমণি, গোলাপী এখন ট্রেনে, সারেং বৌ, জন্ম থেকে জ্বলছি, অলংকার, চোখের মনি, সুন্দরী, এখনই সময়, শাহজাদী গুলবাহার, কসাই, সখিনার যুদ্ধ, ঘর জামাই, পরিবর্তন, সুখদুখের সাথী, ফেরারী বসন্ত, ভাতদে, জয়যাত্রা, প্রভৃতি।
চলচ্চিত্র ছাড়াও টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নাটক, টেলিফিল্ম, প্রামাণ্যচিত্র ও বহু বিজ্ঞাপনে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছন রফিকুল বারী চৌধুরী। একজন গুণী সৃজনশীল চিত্রগ্রাহক হিসেবে সব মাধ্যমেই ছিলেন প্রশংসিত।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি চারবার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮), ‘দুই পয়সার আলতা’ (১৯৮২), হীরামতি’ (১৯৮৮) এবং ‘জয়যাত্রা’ (২০০৪) চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহনের জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেন রফিকুল বারী চৌধুরী। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মাননা।
চলচ্চিত্র পরিচালনায়ও তিনি রেখেছেন মুনশিয়ানার ছাপ।তাঁর প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘তানসেন’ মুক্তিপায় ১৯৭০ সালে। ১৯৭৪ সালে মুক্তিপায় দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘ভুল যখন ভাঙ্গলো, তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘পেনশন’ মুক্তিপায় ১৯৮৪ সালে। ‘পেনশন’ চলচ্চিত্রটি ১৯৮৪ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল। তাঁর চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘চণ্ডিদাস ও রজকিনী’ মুক্তিপায় ১৯৮৭ সালে। রফিকুল বারী চৌধুরী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রযোজিত ‘বাংলা মায়ের দামাল ছেলে’ নামে, ১৯৯৪ সালে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেন।
তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও, আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে সুধীমহলে। একজন ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে, তিনিও অভিহিত হয়েছেন বিশেষ সম্মানে ।
একজন প্রতিভাবান, সৃজনশীল মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক, পরিচালক-প্রযোজক রফিকুল বারী চৌধুরী। চলচ্চিত্র চিত্রায়নে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছিলেন তিনি। সৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী কাজের স্বাক্ষর রেখে গেছেন তাঁর চিত্রায়িত চলচ্চিত্রে। একজন শৈল্পিক চিত্রগ্রাহক হিসেবে, পেয়েছেন সেরা চিত্রগ্রাহকের সুনাম, অধিষ্ঠিত হয়েছেন খ্যাতির শীর্ষ আসনে।
অত্যন্ত গুণী এই চলচ্চিত্রগ্রাহক, টেলিভিশন কেন্দ্রীক চিত্রগ্রাহক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। এই সৃজনশীল মেধাবী মানুষটি নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। চলচ্চিত্রগ্রাহক হিসেবে মহিরূহ ব্যক্তিত্ব রফিকুল বারী চৌধুরী, চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে, এদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অবদান, অবশ্য অবশ্যই স্মরণযোগ্য।