আজাদ আবুল কাশেম: কি সিনেমার চিত্রগ্রাহক হিসাবে, কি স্থিরচিত্রের আলোকচিত্রী হিসাবে- তাঁর খ্যাতি আলোছায়ার নিপুন শিল্পী বলে, তাঁর সুপরিচিতি ক্যামেরার কবিরুপে। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন, দেশবরেণ্য, জননন্দিত চিত্রগ্রাহক ও আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন। তিনি লেখক ও সাংবাদিকও।
ক্যামেরার কবি বলে খ্যাত সৃজনশীল চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন এর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। প্রয়াত এই গুণী ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আনোয়ার হোসেন ১৯৪৮ সালের ৬ অক্টোবর, পুরান ঢাকার আগা নবাবদেউড়িতে জন্মগ্রহন করেন।
তিনি স্হাপত্যকলায় স্নাতক এবং পুনা ফিল্মস ইন্সটিটিউট থেকে সিনেমাটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রী লাভ করেন। স্হিরচিত্র এবং চলচ্চিত্রে সমানভাবে দক্ষ ছিলেন।
১৯৬৭ সালে মাত্র দুই ডলার (সমমান ৩০ টাকা) দিয়ে কেনা প্রথম ক্যামেরা দিয়ে তাঁর আলোকচিত্রী জীবনের শুরু।
প্রথম সাত বছর ধার করা ক্যামেরা আর চলচ্চিত্রের ধার করা ফিল্ম দিয়ে তিনি কাজ করেন। ফিল্মগুলো ছিল সাদাকালো। কর্মজীবনে তিনি অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। ছোটবেলায়ই পরপর দুবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ছবি এঁকে।
ক্যামেরার কবিখ্যাত আনোয়ার হোসেন যেসব চলচ্চিত্রে, চলচ্চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন তারমধ্যে- সূর্য দীঘল বাড়ী, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, পূরস্কার, সুরুজ মিঞা, দহন, হুলিয়া, অন্য জীবন, নদীর নাম মধুমতী, চিত্রা নদীর পারে, লালসালু, শ্যামল ছায়া, তিন সুন্দরী, স্বপ্নভূমি, বস্ত্রবালিকারা (টিভি প্রামাণ্যচিত্র) অন্যতম।
আনোয়ার হোসেন ছিলেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের একজন আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র গ্রাহক। তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র গ্রাহক হিসেবে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক – সূর্য দীঘল বাড়ী(১৯৭৯), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক – এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক – পুরস্কার (১৯৮৩), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক – অন্য জীবন(১৯৯৫), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক – লালসালু (২০০১)।
স্হিরচিত্রগ্রাহক হিসেবে ৪০টিরও বেশী আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ ফিল্মস ইন্সটিটিউট এবং আর্কাইভের কোর্স প্রশিক্ষক ছিলেন।
সৃজনী নৈপুণ্যে সাফল ও আলোছায়ার এক নিপুন কারিগর ছিলেন আনোয়ার হোসেন। আমাদের চিত্রগ্রহণ তথা সামগ্রীকভাবে আলোকচিত্রশিল্পকে সমৃদ্ধ করেগেছেন আলোকচিত্রশিল্পী। এদেশের নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল চিত্রগ্রাহক তথা আলোচিত্রশিল্পী হিসাবে গড়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করবে তাঁর শিল্পকর্মগুলো।