বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও সুরকার স্যার চার্লস স্পেনসার ‘চার্লি চ্যাপলিন’। তাকে বড় পর্দার শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কৌতুকাভিনেতা হিসেবে গণ্য করা হয়। কিংবদন্তি এই অভিনেতার জন্মদিন আজ। ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি।
তার ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজও সারা বিশ্বে সিনেমাপ্রেমীরা স্মরণ করছেন এই মহান শিল্পীকে, যিনি নিঃশব্দ চলচ্চিত্রের যুগে হাস্যরস ও মানবতার গল্প বলায় হয়ে উঠেছিলেন অনন্য।
চ্যাপলিন শুধু একজন কৌতুক অভিনেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সমাজের পীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। তার সৃষ্ট চরিত্র ‘দ্য ট্রাম্প’ বা ‘দ্য লিটল ট্রাম্প’ বিশ্বব্যাপী দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল। টুপি, বাঁকা গোঁফ, ঢিলেঢালা প্যান্ট আর বাঁশির মতো লাঠি নিয়ে চ্যাপলিনের এই চরিত্রটি হয়ে উঠেছিল নির্বাক চলচ্চিত্রের প্রতীক।
চ্যাপলিন লন্ডনে প্রচণ্ড দারিদ্র ও কষ্টের মধ্য দিয়ে শৈশব অতিবাহিত করেন। তার বাবার অনুপস্থিতি ও তার মায়ের অর্থাভাবের জন্য তাকে নয় বছর বয়সের পূর্বেই দুইবার একটি কর্মশালায় কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল। যখন তার বয়স ১৪ তখন তার মাকে পাগলাগারদে পাঠানো হয়।
চ্যাপলিন তার শৈশব থেকেই শিশুশিল্পী হিসেবে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রঙ্গশালায় সফর করেন এবং পরে একজন মঞ্চাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি স্বনামধন্য ফ্রেড কার্নো কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন, যারা তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিয়ে যায়। চ্যাপলিন সেখানে হলিউড চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে যুক্ত হন এবং ১৯১৪ সালে কিস্টোন স্টুডিওজের হয়ে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন।
তার অসামান্য সৃষ্টিগুলোর মধ্যে ‘দ্য কিড’ (১৯২১), ‘সিটি লাইটস’ (১৯৩১), ‘মডার্ন টাইমস’ (১৯৩৬) এবং ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ (১৯৪০) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’-এ হিটলারের ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শিল্পের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
চ্যাপলিনের কর্মজীবন ছিল বর্ণাঢ্য। হলিউডের স্বর্ণযুগে তিনি ছিলেন একচ্ছত্র দাপটের অধিকারী। ১৯৭২ সালে তিনি অস্কার সম্মানে ভূষিত হন এবং ১৯৭৫ সালে রানী এলিজাবেথ তাকে নাইট উপাধি দেন।
জীবনের শেষ সময়ে তিনি ছিলেন সুইজারল্যান্ডে। ১৯৭৭ সালের বড়দিনে সেদেশেই মহাপ্রয়াণ ঘটে চার্লি চ্যাপলিনের। মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া বিশাল সম্পত্তির লোভে চুরি হয় তার কফিনও। তবে তার কফিনটি নিরাপদেই উদ্ধার করে পুলিশ।
কিন্তু চ্যাপলিনের মৃত্যুর বহু বছর পরও ‘মডার্ন টাইমস’, ‘গোল্ড রাশ’, ‘সিটি লাইটস’ এর মত বেশকিছু চলচ্চিত্র আজো প্রেরণা যোগায় পৃথিবীর নানা অঞ্চলের চলচ্চিত্র প্রেমীদের।
আজ তার জন্মদিনে গুগল ডুডলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে #ChaplinDay ট্রেন্ড। চ্যাপলিনের চলচ্চিত্র ও জীবনদর্শন আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ তিনি শুধু হাসাতেন না, হাসির আড়ালে তুলে ধরতেন মানুষের সংগ্রাম ও স্বপ্নের গল্প।