এটাকে আমি গান বলতে চাই না। এটা একজন পিতার আর্তি। আমি ভাবিনি নিবিড় ও তার সহপাঠীদের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর আবারও গাইবো। কারণ সেই মানসিক শক্তি বা আগ্রহটাই মরে গেছে। মাসের পর মাস এই দূর পরবাসে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, ওর কণ্ঠ শোনার অপেক্ষায়। নিবিড়ের তিন সহপাঠীর অনুপস্থিতি আমাকে প্রতিনিয়ত পিতৃসমতুল্য বেদনায় আচ্ছন্ন করে।’
নিজের নতুন গান এবং ছেলের অবস্থা প্রসঙ্গে এভাবেই কথাগুলো বলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিত্। দূর পরবাসে তার একমাত্র পুত্র নিবিড় কুমার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃতুর সঙ্গে লড়াই করছেন প্রায় ১ বছর ধরে। আর তার অসহায় পিতা শুরু থেকেই সব ফেলে পুত্রের সুস্থতার প্রহর গুনছেন হাসপাতালের করিডোরে পায়চারী করে।
মূলত সেই অপেক্ষাময় কঠিন নীরবতাই কুমার বিশ্বজিতের হয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন গীতিকবি হাসানুজ্জামান মাসুম ও সংগীত পরিচালক কিশোর দাশ। তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন কুমার বিশ্বজিত্। গানটির নাম দিয়েছে ‘নিবিড় অপেক্ষা’। কুমার বিশ্বজিত্ বলেন, ‘মাঝে আমি কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম। তখন কিশোর ও মাসুম একটা গান করার জন্য বারবার অনুরোধ করছিল। আমিও বারবার ওদের ইগনোর করেছি। কারণ গানটা তো আমরা প্রাণ দিয়ে করেছি আজীবন। এখন তো আর আমার ভেতরে সেই প্রাণটা নেই। ওরা এরপরও একটা ডামি বানিয়ে আমাকে শোনালো। শুনে মনে হলো, কথাগুলো তো আমারই। সুরটাও আমার ভেতরের হাহাকারের মতো। যেগুলো আসলে প্রকাশ করতে পারছি না। পাথর হয়ে আছি। সত্যি বলতে এই গানটা গাইবার পর পাথরটা খানিক গললো বোধহয়।’ গানটি গতকাল ১৮টি ব্যানারে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি টরন্টোর স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় সড়ক দুর্ঘটনায় কুমার নিবিড় গুরুতর আহত হন। এরপর থেকে গত ১ বছর সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন তিনি। নিবিড় সেখানকার হাম্বার কলেজের শিক্ষার্থী। নিবিড় কুমারের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে কুমার বিশ্বজিত্ বলেন, ‘আশার কথা হলো ও চোখ মেলে। এদিক ওদিক তাকায়। ওর মা আর আমাকে সম্ভবত চিনতে পারে। এটুকুই। সবার কাছে দোয়া চাই ওর জন্য।’