মুজতবা সউদ: ইলিয়াস কাঞ্চন। সমাজ সেবায় ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত এই নায়কের নামটি উচ্চারণের পর, সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না।
বালক বালিকা থেকে বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত সকলেই এই তারকা শিল্পী সম্পর্কে জানেন। প্রখ্যাত পরিচালক, প্রয়াত আলমগীর কবির বলতেন, সামাজিক বা রাজনৈতিক ‘কমিটমেন্ট’ ছাড়া কোন শিল্পী বা শিল্প পূর্নাঙ্গ হতে পারে না। বাংলাদেশের শিল্পী যারা, তাদের মধ্যে ইলিয়াস কাঞ্চনই একটি সুনির্দিষ্ট সামাজিক প্রত্যয় নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছেন।
এ দেশের সড়ক পথে নিয়ম না মানার ব্যাধির বিরুদ্ধে, মানুষের সচেতনতা গড়ে তুলতে সাংগঠনিক ভাবে কাজ করছেন। সারা বাংলাদেশের উপজেলা, এমন কি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বাধীন “নিরাপদ সড়ক চাই” সংগঠনটি। এক সময় এই নায়ক ছিলেন, তরুন প্রজন্মের “আইকন”। অসংখ্য রোমান্টিক কিংবা সামাজিক ছবির নায়ক।
কোন রকম অশালীন বা বিতর্কিত ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। পরিচালক এবং প্রযোজকদের প্রয়োজন বা সুবিধার্থে নির্ধারিত সময়ের বাইরে কাজ করে দিয়েছেন তিনি। ভোর থেকে গভীর রাত অব্দি, শুটিং কিংবা ডাবিং করে যেতে দেখা গেছে তাঁকে। এ দেশে সবচেয়ে ব্যাবসা সফল ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবির নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। প্রথম ছবি ‘বসুন্ধরা’ থেকে অনেক অনেক ছবিতে তাঁর অভিনয়, ঋদ্ধ দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। ইলিয়াস কাঞ্চন পেয়েছেন ‘একুশে পদক’। দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাচসাস সহ বিভিন্ন সংঠনের পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন অনেক।
এর বাইরে তিনি একজন প্রযোজক এবং পরিচালক। তাঁর সংগে ভিন্ন রকম একটা সমন্নয় রয়েছে আমার। কলেজে পড়ার সময় চিপাচসের মুক্ত আলোচনায় যেতাম, শুনতাম দূর থেকে। “বসুন্ধরা” ছবির মুক্ত আলোচনায় প্রথম কথা বললাম আমি। আলোচনার সময়ই বুঝলাম, যে সব প্রসংগ নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলেছি, তা শুধু উপস্থিত দর্শকদেরই নয়, কাঞ্চন ভাই এরও ভালো লাগছে। সেটা ছিলো ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রথম ছবি আর ঢাকায় কোন অনুষ্ঠানে আমার প্রথম আলোচনা। পরক্ষ এই সম্পর্কটা পরে প্রত্যক্ষ হয়ে যায়।
চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন করার সময়, কয়েকটি ওয়ার্কশপ আর পুনা’র সতিশ বাহাদুরের কাছে কোর্স করেছিলাম। একদিন, আলমগীর কবির আমাকে ডেকে “ইন্টার্নশিপ” করার জন্য যে ছবির সহকারি পরিচালক বানালেন, তার নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সেই “পরিণীতা” ছবিতেই কাঞ্চন ভাই পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
সাংবাদিক হিসেবে চাকুরিতে যোগ দেবার পর, সেই প্রত্যক্ষ সম্পর্কটা হয়ে গেছিলো ঘন। যা আজও বিদ্যমান। একুশ পদক, জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও আরো অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা রয়েছে তাঁর প্রাপ্তির ঝুলিতে। ২৪ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন। শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা কাঞ্চন ভাই।
লেখক, সাংবাদিক