শিশুদের খেলাভিত্তিক এবং অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার তিনটি শিক্ষাতরী চালু করেছে ব্র্যাক। একটি তরীতে গণিত, অপরটিতে বিজ্ঞান ও আরেকটিতে মূল্যবোধ শেখানো হচ্ছে। এরই মধ্যে শিক্ষাতরী তিনটি চাঁদপুর সদরে আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর তীরে পৌঁছেছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শুক্রবার এই এলাকায় তরীগুলোর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বই নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যারাই বই নিয়ে অভিযোগ তুলছেন, তারা কিন্তু কেউ আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রমের বই পড়ান না। তাদের অনেকেই এই বইগুলো পড়েও দেখেননি। আমি সবাইকে সত্য যাচাই করে দেখতে বলব।
মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও গণিত যে খুব মজার বিষয়, খুব আনন্দ নিয়ে তা শেখা যায়। কি পদ্ধতিতে শেখালে তা আনন্দময় হয়, তা না করলে খুব সহজ বিষয়ও কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। ব্র্যাক তার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনেক তরীকে শিক্ষাতরীতে রূপান্তরিত করেছে। সেগুলোতে বিজ্ঞানের যত বিষয় আছে, অঙ্কের যত বিষয় আছে তা তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে মানবিকতা-মূল্যবোধের বিষয়ও আছে।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের মূলকথা একই। মুখস্থ না করে কিভাবে আনন্দের সঙ্গে জ্ঞান লাভ করা যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন পরীক্ষার ভয়ে ভীত না হয় এবং মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হয়। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকারের নতুন শিক্ষাক্রমের এই প্রচেষ্টা ও ব্র্যাকের এই প্রয়াসÑএকটি আরেকটির পরিপূরক।
ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, ও মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত, চাঁদপুর সদরের ইউএনও সানজিদা শাহনাজ, চাঁদপুর পৌরসভা মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, ব্র্যাক এডুকেশন প্রোগ্রামের প্রধান প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরপূর্তি (সুবর্ণজয়ন্তী) উপলক্ষ্যে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির একটি বিশেষ উদ্যোগ নেয়। এর আওতায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জের উত্তর-পূর্ব জেলা থেকে যাত্রা শুরু করে বিষয়ভিত্তিক তিনটি ‘অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষাতরী’। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনটি বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে। নৌকাগুলো তাদের যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে থামছে। এর অংশ হিসাবে শুক্রবার চাঁদপুর সদরে আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর তীরে পৌঁছে।
শিক্ষাতরী বিভিন্ন ঘাটে ৭ থেকে ১০ দিনের জন্য থেমে তীরবর্তী এলাকার শিশু, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের পরিদর্শন ও বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। পরিদর্শনের জন্য তরী খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। যে ঘাটে শিক্ষাতরী ভিড়ছে সেখানকার জনগোষ্ঠীর নির্বাচিত শিক্ষকরা দর্শনার্থীদের তরীগুলো ঘুরে দেখতে সাহায্য করছেন।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, শিক্ষাতরীর কার্যক্রম ও উপকরণগুলো বিশেষভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য সাজানো হয়েছে। তবে অন্য শিক্ষার্থী এবং দর্শকরাও এখানে শেখার আনন্দ অনুভব করতে পারবে। এছাড়া শিক্ষাতরীগুলোতে আছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ র্যাম্প। গণিত এবং বিজ্ঞান তরীতে ধাঁধা, হাতে-কলমে পরীক্ষা, গেম খেলে সমস্যা সমাধান এবং মহান বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ পোস্টার দিয়ে সাজানো হয়েছে। মূল্যবোধ তরীটি অংশগ্রহণকারীদের জন্য মূল্যবোধের ওপর নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটি এবং কনটেন্ট রাখা হয়েছে।