ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য অর্জনে ডিজিটাল প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন স্মার্ট মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর অপরিহার্য। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্ম আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাদেরকে ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী আজ শনিবার কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসদরে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।
ডাক ও টেলিযোাগাযোগ মন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট মানুষ চেয়েছেন উল্লেখ করে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তুমি স্মার্ট হলে বাংলাদেশ স্মার্ট হবে। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখনকার যুগে বাস করে তোমরা যদি কোন ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে না পার তবে তোমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন প্রতিটি শিক্ষার্থী ব্যাগে বই নয়, একটি ল্যাপটপ নিয়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই দেশের সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের ডাক ও টেলিযোাগযোগ বিভাগের উদ্যোগে এসওএফ তহবিলের অর্থায়নে আমরা ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পার্বত্য অঞ্চলে ২৮টি পাড়াকেন্দ্রে ডিজিটাল কনটেন্টের পাঠ দানের মাধ্যমে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রা শুরু করেছি।
আরও এক হাজারটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান প্রচলিত পাঠদান পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং স্মার্ট মানব সম্পদ তৈরির জন্য কার্যকর একটি পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা এক বছরের পাঠ্যক্রম দুই মাসেই সহজে আয়ত্বে আনতে সক্ষম এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠ প্রদানের ফলে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং নিয়মিত উপস্থিতির হার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। টেলিযোগোযোগ মন্ত্রী দেশের দূর্গম ও সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাড়া কেন্দ্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠ দানের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেকে টিসি নিয়ে এই সকল স্কুলে চলে আসছে।
যেসব স্কুলে কম্পিউটার আছে সেসব প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল কনটেন্ট দেওয়ার দাবি উঠেছে। সন্তানদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দিতে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করে সন্তানদেরকে প্রযুক্তির মন্দ দিক থেকে নিরাপদ রাখা যায়। এই ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের এই স্বপ্নদ্রষ্টা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, স্মার্ট ফোনের সঠিক ব্যবহার করে তুমি তোমার জ্ঞান অর্জন করে সেরাদের সেরা হতে পার। ১৯৯৯ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া নামের ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, রাজধানীর গুলশানে একটি আমেরিকান স্কুলে কম্পিউটারে পাঠদান আমাকে আলোড়িত করেছিল। বলা যেতে পারে ডিজিটাল স্কুল প্রতিষ্ঠার ধারণাটি আমি সেখান থেকেই গ্রহণ করি।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশ ব্যাপী আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল ও কলেজ শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে অবদান রেখে চলেছে। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যারা পড়ছো, তারা সৌভাগ্যবান। কেননা সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে ডিজিটাইজ করছে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল অনেক আগেই তা করেছে। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের যদি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে বিশ্বের যেকোনো মানদণ্ডকে তারা অতিক্রম করতে পারবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিগত কারণে ডিজিটাল শিক্ষা শিশুদের জন্য যতটা বোধগম্য হয় প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় তা হয়না। প্রচলিত শিক্ষা ডিজিটাল শিক্ষায় রূপান্তর না হলে কঠিন চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে মোকাবিলা করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে তার সুদীর্ঘ ৩৬ বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতারা এনসিটিবির সিলেবাস ও পাঠ্য সূচির বিষয় গুলো ডিজিটাইজ করবে। তবে প্রয়োজনে পাঠ্যসূচির সহায়ক বিষয়ও ডিজিটাইজ করতে হবে।
আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল দাউদকান্দির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিজয় ডিজিটাল এর সিইও জেসমিন জুই বিজয় ডিজিটালের তৈরি প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্য বইয়ের ডিজিটাল কনটেন্ট উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালমা ফেরদৌস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশপাকুজ্জামান, দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিনুল হাসান, পৌরমেয়র নাইম ইউসুফ সেইন প্রমূখ বক্তৃতা করেন।
জেসমিন জুই তার উপস্থাপনায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে মানসম্মত ডিজিটাল কনটেন্টের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, একটি ভালো কনটেন্ট শিশুদের প্রতিভা বিকাশে ফলপ্রসূ অবদান রাখছে। তিনি শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির বিভিন্ন কারিগরি দিক তুলে ধরে তার এ সেক্টরে বিগত ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। প্রতিনিয়তই কনটেন্ট আপডেট করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাঠ্যসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দীর্ঘ প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে আমরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কনটেন্ট তৈরি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি বলে তিনি উল্লেখ করেন। যে শিশুরা পড়তে চায় না তাদের আগ্রহ সৃষ্টিতে ডিজিটাল কনটেন্টে পাঠ প্রদানের ফলপ্রসূ অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, শিশুরা আনন্দের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করে।