জহিরুল ইসলাম মিশু,সিলেট ব্যুরোঃ সিলেট অঞ্চলে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় যেসব শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে গেছে বা হারিয়ে গেছে, তাদেরকে নতুন করে বই দেওয়া হবে। চলতি মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে সেসব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।
সোমবার সিলেট সার্কিট হাউজে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা অ্যাসেসমেন্ট করেছি, কতোজন শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়েছে বা হারিয়ে গেছে। সেই অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বইগুলো নিয়ে এসে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এই মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে আমাদের সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে। এসএসসি ছাড়াওতো অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা আছে, তাদের হাতেও বই পৌঁছে যাবে।
মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক লাঞ্চনার বিষয়ে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যত্যয় দেখছি কোথাও কোথাও। খুবই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা শুধুমাত্র আইন দিয়ে বন্ধ করার বিষয় না। আইন আছে, বিধিবিধান আছে, কিন্তু তারপরেও সামাজিকভাবে আমরা যদি সচেতন না হই, তাহলে এই ধর্মের ধোয়া তুলে নানান জায়গায় অপপ্রচার করে, তারপরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু সেভাবেই ঘটনাগুলো ঘটেছে। কোথাও কোথাও হয়তো দু-একটা ভিন্নরকম আছে। আমাদের সবার চেষ্টা করতে হবে শিক্ষক সমাজ যেন কোথাও কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হয়। সমাজকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কেউ নিগৃহিত হলে আমরা যেন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে না থাকি।
শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্তি নিয়ে অনেক রকম অভিযোগ পাওয়া যায়। আপনারা প্রত্যেকে খেয়াল রাখবেন। একসময় বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছিল সুবিধার জন্য। কিন্তু এমপিওর ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ হয়তোবা সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি করে দিয়েছে কিনা এটাও প্রশ্ন আছে। আমরা চিন্তা করছি, হয়রানিমুক্তভাবে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজটা করা সম্ভব হয়।
এদিকে মতবিনিময় সভায় ধর্মশিক্ষাকে কারিকুলাম থেকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন,ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়নি। এটা অপপ্রচার। ধর্মকে কোনোদিনই বাদ দেওয়া হয়নি, ধর্মশিক্ষা আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও নিশ্চয়ই থাকবে। ধর্ম তো আমাদের নৈকিতা, মূল্যবোধ শেখার মূলক্ষেত্র। কাজেই ধর্মশিক্ষা আছে, থাকবে।অন্যান্য বিষয়ের মতো ধর্মশিক্ষাও এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে শুধু পড়ে মুখস্ত করাই নয়, সেটাকে যেন বুঝে আত্মস্থ করে, চর্চা করে। কাজেই ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
মন্ত্রী বলেন, “যারা প্রশ্ন করছেন, তারা কী আমাদের নতুন কারিকুলামের বা এই ২০২২ সালেও যে বই ছিল, সে বইগুলো কী পড়ে দেখেছেন? একটু দয়া করে পড়ে দেখবেন, তাহলে আর প্রশ্ন করতে হবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে অপব্যবহার করে একটা মহল, একেবারে চিহ্নিত মহল এইসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি বলেন,অনেকে অপপ্রচার চালায় বই থেকে মহানবীর জীবনী বাদ দেওয়া হয়েছে, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বাদ দেওয়া হয়েছে, এগুলো তো সঠিক না। ধর্ম নিয়ে একটা অপপ্রচার করা হচ্ছে, এটা ঠিক না। আগের কারিকুলামে যা ছিল, সেগুলো বাদ দেওয়া হয়নি।এখন ধর্মের মর্মবাণীটা শুধু বোঝা না, ধর্মটাকে সঠিকভাবে সে চর্চাও করতে শিখবে। এটা তো ভালো। যারা ধর্মের বিষয়ে সমালোচনা করছে, তারা ধর্মপ্রীতি থেকে বলছে না। তারা ধর্মটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মেরই ক্ষতি করছে। এইসব লোকদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে অপপ্রচার চলছে, সেগুলোকেও প্রতিহত করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রমা বিজয় সরকার সহ প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।