প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। আক্রান্ত হচ্ছে বহু সংখ্যক।
করোনার প্রকোপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও গত বছরের মার্চ মাসে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী।
জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউনিসেফের মতে, শিশুরা যত বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকবে; সহিংসতা, শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহের মতো বিষয়গুলোর জন্য তাদের স্কুলে ফিরে আসার সম্ভাবনাও তত কমে যাবে।
ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তোমু হজুমি বলেন, “স্কুল বন্ধ থাকায় এবং ব্যক্তিগত শিক্ষাদান কার্যক্রমের অভাবে শিশুদের পড়াশোনাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং তাদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং মনো-সামাজিক সুস্থতাও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।”
ইউনিসেফ প্রতিনিধি আরও বলেন, প্রান্তিক শিশুরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং এ কারণে ভবিষ্যতে তারা আরও দারিদ্র্য ও অসমতার শিকার হবে।
“এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা নিরাপদভাবে স্কুল খোলার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেই এবং শিক্ষাখাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বিনিয়োগ করি। আমাদের আজকের সিদ্ধান্ত এই শিশুদের পুরো জীবনের উপর প্রভাব ফেলবে,” তিনি যোগ করেন।
প্রশমন ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই পুরো প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৮৫ লাখ কোটি টাকা) উপার্জন ক্ষতি হবে বলে অনুমান করছে বিশ্বব্যাংক।
বিদ্যমান প্রমাণাদি বলছে, শিক্ষাখাতের ক্ষতি পুষাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে সেটি বেশি কার্যকর হয়, এবং এক্ষেত্রে খরচও কম হয়। এছাড়া শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এই পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ বিশ্বব্যাপী সকল রাষ্ট্রকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুলগুলোকে পুনরায় চালু করার এবং শিক্ষাখাতে হয়ে যাওয়া ক্ষতি পুষাতে শিক্ষার্থীদের জন্য পুনর্বাসন প্রক্রিয়া হাতে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত ৫ কোটি শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় দেড় লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে গত বছরের ১৭ মার্চ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত ১৭ মাসে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই তাদের একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে রয়েছে।
সরকার একাধিকবার বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।