করোনা অতিমারির কারণে প্রায় ১৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। লকডাউন, কঠোর লকডাউন শেষে সীমিত পরিসরে সব অফিস-আদালত খোলা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বারবার বাড়ানো হয়েছে।
ফলে তৈরি হয়েছে সেশন জট। অন্যদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষা না হওয়ার কারণে অনেকে চাকরিতে আবেদনও করতে পারছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাডেমিক কাউন্সিলও সব বিষয় বিবেচনায় অনলাইন বা অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বশেষ সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় জুলাই থেকে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনলাইনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে পূর্বনির্ধারিত সরাসরি পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগ সরাসরি পরীক্ষার জন্য রুটিন প্রকাশ করে। এর মধ্যে কিছু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আবার অনেক বিভাগ আগে থেকেই অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দুই সেমিস্টারে অনলাইনে পরীক্ষা চলছে। আবার ৪ জুলাই থেকে সরাসরি যে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল সেটিও অনলাইনে নেওয়া হবে। ভাষা বিজ্ঞান বিভাগে ২৫ জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা হবে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ৪ জুলাই থেকে সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও ১০ জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ইতোমধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য নীতিমালা দিয়েছে।
বাংলা বিভাগে ২০২০ সালের মাস্টার্সের সরাসরি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ৪ জুলাই। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে জানতে চাইলে বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন বলেন, আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এখন যেহেতু কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আমদের সব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। মফস্বলের শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সেবাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। সব মিলিয়ে সন্ধ্যায় আমাদের বিভাগের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
বিজ্ঞান অনুষদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে অনুষদের ডিন তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের সরাসরি পরীক্ষার প্রস্তুতি ছিল। শুধুমাত্র ২০১৯ সালের মাস্টার্স পরীক্ষা যাদের আটকে আছে তাদের জন্য সব বিভাগ পরীক্ষার সিডিউল তৈরি করেছিল। এর মধ্যে কিছু পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন সরকারের সিদ্ধান্ত (প্রজ্ঞাপন) দেখে আমাদের পরীক্ষা স্থগিত করতে হবে। আবার অনলাইনে বা শিক্ষার্থীরা চাইলে সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে সবকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে গ্রহণ করা হবে।
তবে এরই মধ্যে সরাসরি পরীক্ষা নিয়ে সপ্তম সেমিস্টারের চারটা কোর্স শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বাহাউদ্দীন জানান, ৮১ শিক্ষার্থীর সবাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। সবাই সুস্থভাবে পরীক্ষা শেষ করেছে।
তবে শিক্ষার্থীরা যেকোনো মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নূর হোসেন ইমন বলেন, শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা থেকে ৪ জুলাই থেকে পরীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী তাদের সমস্যার কথা শিক্ষকদের জানিয়েছেন এ বিষয়ে বিভাগ যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, আমরা ইনকোর্স পরীক্ষা অনলাইনে দিয়েছি। বাকি পরীক্ষাও অনলাইনে হলেও সমস্যা নেই।