English

29 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
- Advertisement -

জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিন: টিএসসিতে শহীদ পরিবারের আর্তনাদ

- Advertisements -

জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিন উপলক্ষ্যে শহীদদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ‘কান্দে আমার মায়’ শীর্ষক এক স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে স্বজনদের স্মরণ করেছেন শহীদ পরিবারের স্বজনরা।

বুধবার বিকালে টিএসসি সংলগ্ন পায়রা চত্বরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ।

Advertisements

রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল আবদুল্লাহ বিন জাহিদ। জুলাই অভ্যুত্থানের ৫ আগস্ট ছেলে হারানোর কথা স্মরণ করে আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘আমার ছেলেকে দুইটা গুলি করা হয়েছে। একটা গলায় ডানপাশে, সব রগ ছিঁড়ে গেছে। আরেকটা পিঠের পিছনে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ডাক্তার পিঠের পিছনটা দেখতেই পারেনি। আমি জানি, আমার ছেলে আমার জন্য কি ছিল! সে হয়তো দেশের জন্য করে গেছে কিন্তু ছেলেটা আমি ও আমার ছোট ছেলের জীবনটাকে পুরোপুরি তছনছ করে দিয়েছে। তিন মাসে আমরা একটুকো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। ছোট ছেলেকে নিয়ে মাসের ১৫ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। ইতিমধ্যে তাকে ৫টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে, ছেলেটার বয়স মাত্র ১৩ বছর। এতো বড় একটা যুদ্ধ, এই লড়াইটি আমি আমার বড় ছেলেকে ছাড়া কিভাবে লড়বো। আমি এমন এক মা যে, জীবন যুদ্ধে দুই ছেলের কাছে হাইরা গেছে।’

সেইদিনের বর্ণনায় দিয়ে আবদুল্লাহর মা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘এ বছর পহেলা নভেম্বর সে জন্মদিন পালন করতে পারেনি। ওকে ছাড়াই আমার এই দিনটি পার করতে হয়েছে। আমার জীবনে ৮০ ভাগই জীবন জুড়েই ছিল আমার বড় ছেলে। ছোট ভাইয়েরও ৮০ ভাগ জুড়েই ছিল আমার বড় ছেলেটি। অনেক শখের জিনিস হয়তো আল্লাহ রাখে না। ওইদিন পৌনে ৫টার দিকে সে বের হয়ে যায়। ৭টা ১২ মিনিটে, ৭টা ৩৬ মিনিটে দিই ও ফোন ধরেনি। পরে আরেকবার দিলে ফোন ধরে; সালাম দিয়ে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা সন্ধ্যা হয়নি? ও উত্তর দেয়, আম্মু আমি এয়ারপোর্টের মাথায় আছি, আধা ঘণ্টার মধ্যে আসতেছি। এই আধা ঘণ্টা, আজও আমার জীবন থেকে শেষ হয়নি, কারণ আব্দুল্লাহ আর ফিরে আসেনি। ৮টা ১০ মিনিটে খবর আসে আমার সন্তানকে গুলি করা হয়েছে। এই ৩৪ মিনিটে আমার জীবন-সংসার সব উজাড় হয়ে গেছে। যাইতে-যাইতে আমাকে বলা হয়, তাড়াতাড়ি উত্তরার মা ও শিশু হাসপাতালে আসুন না হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হবে। পরে গিয়ে দেখি, আমার আবদুল্লাহ আর নাই!’

Advertisements

তিনি আরও বলেন, ‘ছোট ভাই ঘনঘন অসুস্থ ছিল, এ নিয়ে আবদুল্লাহ বেশ টেনশনে ছিল। অথচ তার মারা যাওয়ার ১৪ দিন পর ধরা পড়ে ওর কোলন ক্যান্সার হয়েছে। এখন সে তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। আমার অনুরোধ থাকবে, সবাই আমার ছেলেদের জন্য দোয়া করবেন।’

৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করে করে দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস। ছেলের মৃত্যুর স্মৃতিচারণ  সানজিদা খান দিপ্তী বলেন, ‘১৬ বছরে আমার সন্তান। কিছুই জানে না, তারপরেও আন্দোলনে গেছে। সব হারিয়ে ফেলেছি আমি, আনাস আপনাদের কাছে শুধু একটি শহীদদের নাম কিন্তু আমার কাছে আমার সন্তানটা ছিল সারা পৃথিবী। আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। আর যেন কোন যুদ্ধে যেন আর কোন মায়ের কোল খালি না হয়। যে দেশের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আমাদের সন্তানরা যে আন্দোলনে নেমেছিল তাদের রক্ত বৃথা হতে দেবেন না, সেই স্বপ্নের দেশটা যেন এ জাতি পায়।’

এসময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীন, শহীদ ফাহমিন জাফরের মা, শহীদ আব্দুল আহাদের বাবাসহ অনেক আহত-নিহত পরিবারের সদস্যরা আপনজন হারানোর স্মৃতি তুলে ধরেন। স্মৃতিচারণ ছাড়াও শোকগীতি, পথনাট্য, দোয়ার আয়োজন করা হয় জুলাই অভ্যুত্থানে আহত-নিতদের স্মরণে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন