এসএসসি পরীক্ষার আগেই বাবা-মায়ের পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় মারুফা বেগমের। তাদের দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। ইচ্ছা থাকলেও সংসার সামলাতে গিয়ে আর হয়নি পড়াশোনা। অবশেষে মেয়ের সঙ্গে শুরু করেন স্কুলজীবন। এসএসসি পাসের পর এবার দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মারুফা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী গ্রামের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। ২০০৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন মারুফা। সে বছরই তার অমতেই বিয়ে হয়। সংসার জীবনে আসার পরও সেই ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয়নি পড়াশোনার। তবে মনের ভেতর লালিত স্বপ্নের তাড়নায় স্বামীর সহযোগিতায় মেয়ে শাহী সিদ্দিকীর সঙ্গেই ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে।
এসএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর এবার মেয়ের সঙ্গে দিচ্ছেন চলতি এইচএসসি পরীক্ষা। উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ডিমলা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মেয়ে। আর একই প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিমলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে দিচ্ছেন মা ।
স্বপ্নবাজ নারী মারুফা বেগম বলেন, ‘অভাবের সংসারে বড় হয়েছি৷ যখন দশম শ্রেণিতে বাবা মা বিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আর মেয়েদের এত জোর ছিল না। ইচ্ছা থাকলেও পড়তে পারিনি। তবে পড়াশোনার ইচ্ছা কখনো দমে যায়নি। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করলে তিনি সম্মতি দেন। মেয়ের সঙ্গে পড়াশোনার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করে আবার অনেকে অভিনন্দন জানান। তবে এবার ভালো ফল পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির চেষ্টা করবো।’
মারুফা বেগমের স্বামী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্ত্রীর পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েছি মাত্র। ও যতদূর পড়তে চায় আমি তাকে সাপোর্ট দেবো। আর তার এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। বেশি কিছু বলার নাই।’
এ বিষয়ে শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকেই মারুফা ও শাহী সিদ্দিকী পরীক্ষা অংশ নিচ্ছে। তবে তাদের একজন কারিগরি থেকে ও আরেকজন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। আমরা সবাই তাদের উৎসাহ দেই। আর আশা রাখি ভালো রেজাল্ট করবেন তারা।