সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ করায় ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। এ ঘটনায় শনিবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
এ ঘটনার মধ্যেই রিভা ও রাজিয়ার বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ তুলেছেন ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, জান্নাতুলের ওপর সহিংস আচরণ নতুন নয়। আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। বৈধ রুমের মেয়েরা উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করার সময় সভাপতির (তামান্না জেসমিন রিভা) অনুসারীরা তাদের ছবি তুলে পরে রাখেন। সেখান থেকে সুন্দরীদের বাছাই করেন। পরে বাছাইকৃত মেয়েদের রুমে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে খারাপ উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন ধরনের কু-প্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ, তারা ওই মেয়েদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করাতে চান।
কিছুদিন আগে একজন মেয়ে কান্না করতে করতে এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন উল্লেখ করে বৈশাখী বলেন, ‘কলেজের কর্মকর্তারা সবাই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তারা জব্দ।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলের সুনাম যেন ক্ষুণ্ণ না হয় সেজন্য এতোদিন কিছু বলিনি। কিন্তু ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিন দিন এমন বৈরী আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে যাবে।’
সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাহায্য না করে আমরা যদি সিট বাণিজ্য, মেয়ে বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করি, তাহলে তো ইডেন কলেজেরও বদনাম হবে।’
এদিকে শনিবার রাতে মারধরের পর জান্নাতুল ফেরদৌস আত্মহত্যার হুমকি দেন। এমন অবস্থায় জনরোষের মুখে পড়ে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা রাতের আঁধারেই হল ছেড়ে পালিয়ে যান।
সিট বাণিজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় এই মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি জান্নাতুল ফেরদৌসের। তিনি অভিযোগ করে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাকে কক্ষে আটকে মারধর করা হয়েছে। আমার আপত্তিকর ছবিও তুলে রেখেছেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাদের সমর্থকরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে আমি আত্মহত্যা করবো।’
হামলার ঘটনায় রাত ৩টার দিকে ক্যাম্পাসে আসেন ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য। এ ঘটনায় রাতেই অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ছাত্রলীগের একাংশসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাসের হল সুপার নাজমুন নাহার।
এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আজ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়।
কমিটির সদস্যরা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইডেন মহিলা কলেজ শাখায় সংঘটিত বিশৃঙ্খলার তদন্তে’ এ কমিটি গঠন করা হলো।