ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল যুগের শিক্ষায় নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে নতুন ধারা সৃষ্টির এখনই সময়। আমাদের তরুণরা খুবই মেধাবি। দেশের শতকরা ৬৫ভাগেরও বেশি এই তরুণ জনগোষ্ঠী সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মূল শক্তি।
নতুন ধারার ডিজিটাল শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকার। এই লক্ষ্যে মন্ত্রী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেডবডির বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর এক হোটেলে বিডি সায়েন্স টেকনলজি ও ম্যাথ ফাউন্ডেশন- স্টেম-আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অনলাইনে সংযুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান।
বুয়েট-এর উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের উপাচার্য, সাবেক উপাচার্যবৃন্দ, গবেষক ও অধ্যাপকবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহীত উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, অতীতের দুটি শিল্প বিপ্লব মিস করে বাংলাদেশ প্রযুক্তি দুনিয়া থেকে ৩২৪ বছর পিছিয়ে থাকে। ১৯৬৯ সালে শুরু হওয়া তৃতীয় শিল্প বিপ্লব বা ইন্টারনেট শিল্প বিপ্লবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক আইটিইউ ও ইউপিইউ-এর সদস্য পদ অর্জন, বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, টিএন্ডটি বোর্ড গঠন, প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে অংশ গ্রহণের ভিত্তি তৈরি করেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে অংশ গ্রহণের অভিযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২১ বছরের পশ্চাদপদতাসহ পরাজিত শক্তির রেখে যাওয়া সকল উন্নয়ন বিরোধী অপপ্রয়াস অতিক্রম করে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে মোবাইল, ইন্টারনেট ও কম্পিউটার প্রযুক্তি বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেন যুগান্তকারি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের আন্দোলনের অগ্রনায়ক জনাব মোস্তাফা জব্বার।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্বের সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরে দীর্ঘ ৩৫ বছর ডিজিটাল প্রযুক্তিখাতে তাঁর সংগ্রামের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীতে ২০১৬ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণা ঘোষনার ৮ বছর আগে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আমাদের আর্থ –সামাজিক প্রেক্ষাপটে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে উন্নত দুনিয়া যেভাবে দেখছে আমাদেরকে তা সেভাবে দেখলে চলবে না। উন্নত বিশ্বে ডিজিটাল প্রযুক্তি মানুষের স্থলাভিসিক্ত হবে। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠাীর বিবেচনায় যন্ত্রকে মানুষের স্থলাভিসিক্ত করার ধারণাটি গ্রহণযোগ্য হবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিপ্লবের মধ্য দিয়েই আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের এ্ই অগ্রদূত।
বুয়েট –এর ভিসি সভাপতির বক্তৃতায় ডিজিটাল প্রযুক্তিকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মন্ত্রী প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
পরে মন্ত্রী ঢাকায় আইসিএমএবি‘র ডিজিটাল সিপিডি প্লাটফর্মের উদ্বোধন করেন। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দেশের প্রতিটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এটি একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, পেশাগত দক্ষতা ছাড়া সামনে এগুনোর সুযোগ নাই। যে কোন পরিস্থিতিতে এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে যে কোন সহায়তা প্রদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বদ্ধপরিকর।