ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নিয়ে যা কিছু ঘটছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। দিন, মাস, বছর থেকে এখন দশক পার হলেও বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর হয়নি। আদালত দায়িত্ববানদের তলব করছেন, তিরস্কার করছেন এবং অসন্তোষও প্রকাশ করছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। মানববর্জ্যের পাশাপাশি শিল্পবর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, ইটভাটা, পলিথিন ইত্যাদির কারণে বুড়িগঙ্গা দূষিত বর্জ্যের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে, এটা যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে।
সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) সতর্ক করেছেন। একই সঙ্গে রায় বাস্তবায়ন করে এক মাসের মধ্যে (২৮ অক্টোবর) আদালতে প্রতিবেদন দিতে ওয়াসার এমডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময় আদালত বারবার সময় নেওয়া এবং প্রতিশ্রুতি অনুসারে রায়ের বাস্তবায়ন না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ওয়াসার এমডি ইচ্ছাকৃতভাবে রায় প্রতিপালন করছেন না। আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে কোনো হেলদোল না থাকায় এ বক্তব্য সঠিক বলতেই হবে।
একসময় নির্বিঘ্নে বুড়িগঙ্গার বুকে স্টিমার-লঞ্চ চলেছে। জলজ প্রাণী বসবাস করেছে স্বাচ্ছন্দ্যে। বিকেলে, সন্ধ্যায় মানুষ বুড়িগঙ্গার পাড়ে আড্ডা জমিয়েছে। বুড়িগঙ্গা ঢাকাবাসীকে ইলিশ মাছও উপহার দিয়েছে। এমন একটি নদী আমাদের সবার চোখের সামনেই অত্যাচারে-অনাচারে, দূষণে-বিষণে এখন মৃতপ্রায়। এখন বুড়িগঙ্গার তীরে বেশির ভাগ সময় নাক চেপে ধরতে হয়। বেশি বৃষ্টি হলেই কেবল দূষণ কিছুটা কমে।
বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১০ সালে রিট আবেদনটি করা হয়। ২০১১ সালের ১ জুন তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালির লাইন (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়। ওই নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত বছরের ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে সংগঠনটি। এর ধারাবাহিকতায় গত ৪ মার্চ ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান আদালতে হাজির হয়ে রায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। গত ১৮ আগস্ট ও ৭ সেপ্টেম্বর ওয়াসা দুটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে আদালত সন্তুষ্ট হতে পারেননি।