উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রাখতে হলে নতুন নতুন প্রকল্প নিতেই হবে। কিন্তু সেই প্রকল্প তৈরি করতে গিয়ে খরচের যেসব প্রস্তাব করা হয়, তা দেখে অবাক হতে হয়। এমনই একটি প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে, যা দেখে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা নিয়ে সবারই মনে প্রশ্ন জাগবে। মনে হবে উন্নয়ন নয়, লুটপাটই প্রকল্প প্রণয়নের আসল উদ্দেশ্য।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটির নাম পানিসাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি এবং পলিশেড নির্মাণের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে ৪৫টি উপজেলায়। বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৪০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এতে চারা রোপণের জন্য তিন হাজার ট্রের প্রয়োজন হবে।
বাজারে একেকটি ট্রের দাম ৬০ থেকে ১০০ টাকা। প্রকল্পে দাম প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিটি ৭০০ টাকা করে। দুই হাজার ১০০টি এয়ার সার্কুলেশন ফ্যান কিনতে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। একেকটি ফ্যান কিনতে ৫০ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে, যা বাজারে আট থেকে ১০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণ, মেলা ও সেমিনার আয়োজনের জন্যও বড় ধরনের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদনে যথেষ্ট এগিয়েছে। তা করেছেন মূলত এ দেশের কৃষক ও উদ্যমী তরুণরা। এর জন্য কয়েক শ কোটি টাকার প্রকল্প বা বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়নি। তার পরও এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ এবং তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কৃষি প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার চরিত্র এমন হবে কেন?
অতীতে প্রকল্প নিয়ে অনেক কাহিনি তৈরি হয়েছে। হাওরাঞ্চলে প্রকল্প গ্রহণে ব্যাপক অনিয়মের কথা এলাকার মানুষের মুখে মুখে। প্রকল্পের কাজ ঠেলে নেওয়া হয় বর্ষাকালে, যখন কাজ না করেই অর্থ লোপাট করা যায়। কেনাকাটা নিয়েও আছে বালিশকাণ্ডের মতো অনেক কাহিনি। ৫০০ টাকার বালিশ কেনা হয় সাত হাজার টাকায়। রুটির তাওয়া কেনা হয় তিন হাজার টাকায়।
দামি দামি গাড়ি ক্রয়সহ আরো কত কী? প্রকল্পের অর্থে বিদেশ সফরের বিষয়টি নিয়ে অতীতে প্রধানমন্ত্রী নিজেও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তার পরও প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণ বা সফরের কমতি দেখা যায় না। বর্তমান প্রকল্পেও বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য ৬০ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
কোনো দেশের উন্নয়ন বহুলাংশে নির্ভর করে সৎ ও দক্ষ আমলাতন্ত্রের ওপর। দুর্ভাগ্য, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই বঞ্চিত। এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হবে। তাঁরা প্রকল্প প্রণয়নে দেশের প্রয়োজনটাকে গুরুত্ব দেবেন, ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।