দেশে জঙ্গিবাদের চর্চা দৃশ্যমান হয় দুই দশক আগে আত্মঘাতী বোমা হামলার মধ্য দিয়ে। শুরুর দিকে পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে এবং আরো কিছু জায়গায় বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিরা সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটায় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একযোগে ৬৩ জেলায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। ২০১৩ সালে আবার তারা একটু ভিন্নভাবে সক্রিয় হয়। ব্যক্তিবিশেষকে টার্গেট করে চাপাতি হামলা চালাতে শুরু করে তারা।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হয়। গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার পর সপ্তাহ না পেরোতেই আরেক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ ঘটতে যাচ্ছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত শোলাকিয়ায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতায় তারা ঈদের জামাত পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি।
পুলিশের দুজন সদস্য নিজেদের জীবন দিয়ে তাদের পথেই রুখে দেন। এরপর জঙ্গি নির্মূলে সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট ও জোরালো হয়। বেশ কিছু জঙ্গি আস্তানায় র্যাব-পুলিশ অভিযান চালায়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জঙ্গি সংগঠনগুলোর দৃশ্যমান তৎপরতা বন্ধ থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সদস্য সংগ্রহ তৎপরতা মারাত্মক আকারে বেড়েছে। নামে-বেনামে অসত্য তথ্য দিয়ে তারা আইডি খুলছে। ফলে তাদের শনাক্ত করতেও সমস্যা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কাজে লাগিয়ে যেভাবে তারা সংগঠিত হচ্ছে, তাতে তারা সুযোগ পেলেই বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
দুই দশক ধরে ইসলামের নামে জঙ্গিদের উত্থান সারা বিশ্বেই উদ্বেগের কারণ হয়েছে। বাংলাদেশেও তারা নানা নামে তৎপরতা চালিয়েছে। তাদের হামলায় বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীরও অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে জঙ্গিদের প্রকাশ্য তৎপরতা না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সক্রিয়তা ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাইবার ইউনিটকে বিশেষভাবে তৎপর হতে হবে।
শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন সারা দুনিয়ার প্রশংসা কুড়িয়েছে। জঙ্গিদের এ ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে উন্নয়নের সেই গতি ব্যাহত হবে। একসময়ের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লিবিয়ার দিকে তাকালেই আমরা এ কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পারব।
আমাদের উন্নয়ন, আমাদের রপ্তানি, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে মুখ থুবড়ে না পড়ে সে জন্য জঙ্গি দমনে সর্বোচ্চ দৃষ্টি দিতে হবে। জঙ্গি মোকাবেলায় বিশেষায়িত বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আলেম-উলামারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।