দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গেলে এর নেতিবাচক দিকগুলোই সবার আগে সামনে চলে আসে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা মেলে না। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালের অনেকটির বিরুদ্ধে রয়েছে চিকিৎসা বাণিজ্যের অভিযোগ। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে অনেকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও রোগীর স্বজনদের অনেকেই দেশের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ করেছে। বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে এসব অভিযোগ নতুন নয়। চিকিৎসকের কাছে গেলেই একগাদা পরীক্ষার মুদ্রিত ফর্দ ধরিয়ে দেওয়া, সেসব থেকে কমিশন পাওয়া, রোগ পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়া, প্রয়োজন না থাকলেও আইসিইউতে ঢুকিয়ে দেওয়া, অত্যধিক বিল করা—এমন বহু অভিযোগ বহুদিন থেকেই আলোচিত হয়ে আসছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতেও সেবার মানোন্নয়নের অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যা রয়েছে ৫১ হাজার ৩১৬টি। কিন্তু কয়েকটি হাসপাতাল বাদ দিলে বাকিগুলোর চিকিৎসার মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ। কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অচল করে ফেলে রাখা হয়। চিকিৎসক থাকেন না। অ্যাম্বুল্যান্স বা অন্যান্য সেবা প্রায় না থাকার মতো। অথচ সরকারি হাসপাতালগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হলে দেশে চিকিৎসাসেবার ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা যেত।
সরকারি হাসপাতালে সাধারণত চিকিৎসা নিতে আসে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের বেশির ভাগের পক্ষেই বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে উচ্চমূল্যে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। ইচ্ছাকৃতভাবে যন্ত্রপাতি বিকল করে রাখার অভিযোগও আছে। কালের কণ্ঠে গতকাল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতাল নিয়ে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালটির ২০ শয্যার আইসিইউতে চিকিৎসক ও নার্সের অভাব না থাকলেও ভোগান্তির কারণ হচ্ছে নষ্ট সরঞ্জামগুলো। বেশির ভাগ মনিটরের পালস অক্সিমিটার মেশিনের প্রোব ভাঙা, তার ছেঁড়া। কিছু মনিটরের ইসিজি লিড নষ্ট। যন্ত্রপাতি সংকটে থাকা আইসিইউ বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমে চলছে। এখানে ভর্তির জন্য প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন রোগী অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু শয্যাসংকটের কারণে অনেক রোগী ভর্তি করা সম্ভব হয় না।
চট্টগ্রামকে বলা হয় দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। সেখানকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এ অবস্থা কাম্য হতে পারে না। অবিলম্বে এই হাসপাতালের আইসিইউর সব সংকট কাটিয়ে উঠতে ব্যবস্থা দেওয়া হবে এবং আইসিইউর শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।