পৃৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এর মূল অংশ বাংলাদেশে, ছোট একটি অংশ রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বনের ঘনত্ব, বন্য প্রাণী ও সৌন্দর্যের দিক থেকেও বাংলাদেশের অংশ অনেক বেশি সমৃদ্ধ। অথচ ভারত এই সুন্দরবনের পর্যটন থেকে বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, বাংলাদেশ পায় সেই তুলনায় অনেক কম। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশের সুন্দরবনে নিরাপত্তার অভাব এবং সে কারণে পর্যটন জমে না ওঠা। তিন বছর আগে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
তখন সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩২টি জলদস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছিলেন। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আত্মসমর্পণকারীদের অনেকেই আবার দস্যুতায় ফিরে গেছেন। সেই সঙ্গে নতুন নতুন জলদস্যু বাহিনী গড়ে ওঠার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। গত দুই বছরে পুলিশ, র্যাব ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা এমন প্রায় দেড় শ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন। এ সময় অন্তত ১২ জন জলদস্যু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
জানা যায়, আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের অনেকে অভিযোগ করেছেন যে তাঁদের পুনর্বাসনে নেওয়া উদ্যোগগুলো খুব একটা সহজ নয়। আবার অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তাঁরা নানাভাবে হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন। গ্রামের মাতবররাও তাঁদের খুব একটা সহজভাবে নিচ্ছেন না। ফলে কেউ কেউ পুরনো কাজে ফিরে যাচ্ছেন। আবার ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি জলদস্যু বাহিনী আছে, যারা সে সময় আত্মসমর্পণ করেনি। তারাও নানাভাবে দস্যুতা চালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর নিয়মিত অভিযানের কারণে তারা আগের মতো ডাকাতি, অপহরণ করতে পারছে না। তারা এখন মূলত চোরাশিকারির কাজ করছে। ফলে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হলেও বর্তমান বাস্তবতায় এখন তা বলা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আমরা কথায় বলি সুন্দরবন আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। কিন্তু সুন্দরবনের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে আমরা খুব কমই পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রায় প্রতিবছরই সুন্দরবনের ভেতরে এক বা একাধিক ইচ্ছাকৃত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। চোরাশিকারিদের হাতে বাঘ, হরিণসহ অনেক বন্য প্রাণী মারা পড়ছে অথবা ফাঁদে আটকা পড়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বনের গাছ কেটে পাচার করা তো প্রায় নিয়মিত ঘটনা। আবার বন দখল করে মানুষের বসতি স্থাপন বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হওয়ার কারণেও সুন্দরবন ক্রমে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সুন্দরবনকে রক্ষায় আমাদের আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। সুন্দরবনে ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। আর এসবের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সুন্দরবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন