বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় এখন বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। মানুষের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জীবনযাত্রায় ব্যয়। মূল্যস্ফীতির প্রভাব গরিব মানুষের ওপরই বেশি পড়ে। কারণ তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যায় খাদ্যপণ্য কিনতে। আবার খাদ্যপণ্য কিনে যত টাকা খরচ হয়, এর ৫০-৬০ শতাংশ চলে যায় চালের পেছনে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, নতুন বছরের শুরুর জানুয়ারিতে খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কিছুটা বেড়ে ৫.২৩ শতাংশ হয়েছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত ফেব্রুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৩২ শতাংশ। জানুয়ারির তুলনায় যা .০৩ শতাংশ বেশি। সার্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫.৪২ শতাংশ, যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৫.২৩ শতাংশ।
করোনাকালে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা যদি চলতি অর্থবছরের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, গত সেপ্টেম্বরে খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.৫০ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ৫.৩০ শতাংশ ছিল। গত সেপ্টেম্বরে গ্রামে খাদ্য উপখাতের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬.৬১ শতাংশ, যা গত বছরের ওই মাসে ছিল ৫.৩৮ শতাংশ। আরেকটি তথ্য বলছে, বেশির ভাগ সময় খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকায় ২০২০ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৬৯ শতাংশ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হচ্ছে, খাদ্যপণ্যের ছয় মাসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ৭.৩৪ শতাংশে উঠেছিল। তবে পরের তিন মাস তা কমেছিল। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৭৩ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে তা ৫.৩৪ শতাংশে নেমে আসে। আর জানুয়ারি মাসে আরো কমে ৫.২৩ শতাংশ হয়।
তিন মাস কমার পর ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির চাকা উল্টো ঘুরতে শুরু করে। এই মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৫.৪২ শতাংশে। মার্চ এবং চলতি এপ্রিল মাসেও প্রধান প্রধান ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরাও। রোজা আসছে, বিশ্ববাজারে কিছু ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে গরিব মানুষ সবচেয়ে চাপে থাকবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমদানি ঠিক রেখে সাপ্লাই চেইন সচল রাখার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বয়। সে দক্ষতা সরকারকেই দেখাতে হবে।