রাজধানীতে এডিস মশার প্রজনন ও বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গু। নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। ডেঙ্গুতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১২৫ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এ সময়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই একই সময়ে করোনায় শনাক্তের হার বেড়ে দাঁঁড়িয়েছে ১৫.৩৮ শতাংশ। এ সময় মারা গেছে একজন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনার সংক্রমণের চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা করতে দেখা গেছে। করোনা পরিস্থিতি প্রায় সাড়ে তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। করোনার নতুন ধরনের প্রভাবে দ্রুত বাড়ছে শনাক্তের হার। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে করোনার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমানে তা ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছিল ২০০ থেকে ৩০০ জন।
বর্তমানে তা সাত শর কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবন-জীবিকার তাগিদেই অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েও বিষয়টি গোপন রাখছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা না হলে অনেকেই করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে না। অনেকে আক্রান্ত হয়েও বাইরে যত্রতত্র ঘোরাফেরা করছে। এতে সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
অন্যদিকে ঢাকায় এডিস মশার বর্তমান ঘনত্ব ডেঙ্গু ছড়ানোর উপযোগী মাত্রায় রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া খবর অনুযায়ী ডেঙ্গুতে সেপ্টেম্বরের ২৩ দিনে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ছয় হাজার ৮১৯ রোগী। প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমনিতেই বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকার ফলে মশার প্রজনন বেড়ে যায়। চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অধিক হারে বৃষ্টি হয়েছে। পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমে থাকার ফলে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা সহজেই বংশ বিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া রাজধানীর অনেক বাড়িতে এখন শখের বশে বাগান করা হয়। এসব পাত্রে পানি জমে থাকলে সেখানেও এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে।
আমরা একটু সচেতন হলেই ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব। এডিস মশা প্রতিরোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাধারণ নাগরিকদেরও অংশগ্রহণ করতে হবে। বাসাবাড়িতে অতিরিক্ত পানি জমতে দেওয়া যাবে না। বছরের শুরু থেকেই হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে পারলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এত বাড়ত না।
আমরা একটু সচেতন হলে অনেক রোগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও এ কথাটা খাটে। করোনার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হচ্ছে মুক্তির একমাত্র পথ।
নাগরিক সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু ও করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে।