বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আর এ জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আরো বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য শ্রীলঙ্কার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সুদর্শন দীপাল সুরেশ সিনিভিরন্তে বুধবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে বাংলাদেশ এবং এখানে বিদেশিদের জন্য প্রদত্ত অনুকূল ব্যবসার সুযোগ গ্রহণ করে শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন।
শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার জানান, তাঁর দেশ বাংলাদেশের বিমান খাত এবং নার্সদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিপিং, হাসপাতাল, পর্যটন, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক খাতে বিনিয়োগ ও কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী। অন্যদিকে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে চমৎকার স্থান অভিহিত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। তিনি বলেছেন, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি ব্রিটিশ কম্পানি বাংলাদেশে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম শুরু করবে। যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ বিনিয়োগ সংলাপ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানাতে বুধবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে যোগাযোগ অবকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে। যাতায়াতের সময় অনেকটাই কমেছে। পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আগের মতো বিদ্যুৎ-জ্বালানির সমস্যাও এখন নেই। অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের জন্য অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসবের ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে; কিন্তু তা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নয়। তার একটি বড় কারণ ব্যবসা শুরু করা এবং তা পরিচালনায় নানা রকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি ও দৃশ্য-অদৃশ্য নানা রকম প্রতিবন্ধকতা। ফলে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসেও ফিরে যাচ্ছে। এর কারণ জানা যায়, বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট ২০১৯-এ।
রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবসায়ের পরিবেশের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। ২০২১ সালে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি জানান, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি তদারক করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে দুটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়েছে। বুধবার চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশ ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বিষয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি জানান, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বিকাশে বিডা সরকারি বিভিন্ন সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধনে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে।
আমরা আশা করছি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিকতা ও তাঁর সরকারের সদিচ্ছা অবশ্যই বিনিয়োগ উন্নয়নের বাধাগুলো অপসারণ করতে সক্ষম হবে। দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুত এগিয়ে যাবে।