নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে গত রবিবার সন্ধ্যায় একটি পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় ৫০ জনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জগামী একটি লঞ্চ ডুবে যায়। সোমবার রাত পর্যন্ত লঞ্চটি থেকে ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভেসে ওঠা আরো পাঁচটি লাশ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে লঞ্চডুবিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪।
ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উদ্ধার করে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। লঞ্চের ভেতর থেকে ২২ জনের লাশ উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মীরা। ওই দিন বিকেলে ও সন্ধ্যায় নদীতে এক শিশু ও এক যুবকের লাশ ভেসে উঠলে তা উদ্ধার করেন নৌ পুলিশের উদ্ধারকারীরা। রবিবার রাতে উদ্ধার করা হয় পাঁচ নারীর লাশ।
নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, যে জাহাজটি ধাক্কা দিয়েছে সেটিকে শনাক্ত করা হয়েছে। সেটিকে আটক করার জন্য অভিযান চালাচ্ছেন তাঁরা। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করার অভিযানে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, বিআইডাব্লিউটিএ, নৌ পুলিশসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা অংশ নেয়। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, লঞ্চডুবিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মুন্সীগঞ্জের।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যার চর সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছে একেএল-৩ নামের একটি কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় সাবিত আল হাসান নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ।
লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় রবিবার রাতেই দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু সেসব কমিটির প্রতিবেদন খুব কমই আলোর মুখ দেখে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব সুপারিশ করা হয়, সেগুলো বাস্তবায়নে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা-ও জানা যায় না।
দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও খুবই কম, যা হয় সেটিকে ‘আইওয়াশ’ই বলা যায়। লঞ্চ দুর্ঘটনা বিশেষ করে বর্ষাকালে প্রায়ই ঘটে থাকে। অনেক মানুষের প্রাণ যায়। জানা যায়, যাঁরা এসব নৌযান চালান, তাঁদের বেশির ভাগেরই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ থাকে না। ফলে চালকদের অদক্ষতাই হয়ে ওঠে লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। কিন্তু এ অবস্থার কি পরিবর্তন হবে না? মানুষ কি এভাবে বেঘোরে প্রাণ হারাতে থাকবে! দ্রুত এ প্রবণতার অবসান হোক।