দেশে করোনার সংক্রমণ হয় গত বছরের মার্চ মাসে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অফিস-আদালত সব কিছুই বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিছুদিন পর শর্ত সাপেক্ষে কলকারখানা, অফিস, মার্কেটসহ প্রায় সব কিছুই খুলে দেওয়া হয়; কিন্তু খোলেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এক বছর তিন মাস ধরে বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হাট-বাজার, খেলার মাঠসহ সর্বত্রই শিক্ষার্থীদের চলাচল রয়েছে, শুধু যেতে পারছে না শিক্ষাঙ্গনে। নিতে পারছে না জীবন গড়ার অতি প্রয়োজনীয় পাঠ। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন স্থায়ীভাবে ব্যাহত হয়েছে। ঝরে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বহু শিক্ষার্থীর। বহু শিক্ষার্থীর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠায় রয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। শিক্ষকরাও চান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া হোক। কিন্তু একের পর এক তারিখ দিয়ে শিক্ষাঙ্গনের ছুটি বাড়িয়েই যাচ্ছে সরকার। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছুটি বাড়ানো হয়েছে ২৯ মে পর্যন্ত। এরপর যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার এমন সরকারি সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁদের মতে, এক অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে এ দেশের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর আগে হল, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। জানা যায়, শিগগিরই আবার আন্দোলনে নামতে পারেন তাঁরা। এই পর্যায়ে এসে সরকার ভাবছে, আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে, পরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। কিন্তু সেটি কত দিনে সম্ভব হবে তা-ও কেউ জানেন না। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর প্রায় ১৫ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কারণ টিকার সরবরাহ নেই। চীন উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে, আরো ছয় লাখ ডোজ টিকা দেবে বলেছে। এ ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো আশ্বাসও নেই। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতায় চীনের সঙ্গে টিকার চুক্তি সম্পাদনও পিছিয়ে গেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছয় লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত টিকা কত দিনে আসবে কেউ জানেন না। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কী হবে? তাঁদের সংখ্যা তো আরো অনেক বেশি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বয়স আঠারোর নিচে। তাদের এখন টিকা দেওয়া যাবে না। তাহলে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি বন্ধই থাকবে? এত দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ ছাড়া খুব কম দেশেই আছে।
করোনা মোকাবেলায় নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের আরো বেশি যৌক্তিক হতে হবে। অনলাইন শিক্ষার কথা বলা হলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর জন্য তা সহজলভ্য নয়। অনেক শিশুর স্কুলে যাওয়ার বয়স হলেও স্কুলে যেতে পারছে না। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এগুলো শুধু ব্যক্তির নয়, জাতীয় জীবনেও অনেক বড় ক্ষতির কারণ। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি জরুরিভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।