সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব মাদকদ্রব্য। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও তরুণসমাজে মাদকাসক্তি ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। যেকোনো মাদক ব্যবসায়ীর প্রধান লক্ষ্য উঠতি বয়সী কিশোর ও তরুণরা। অন্যদিকে মাদকাসক্তরাও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। সমাজের বিত্তবান ও ভদ্রঘরের সন্তানদের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানরাও সর্বনাশা এ নেশার জগৎ ঘিরে গড়ে তোলে বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে ভয়ংকর মাদক আইস।
ইয়াবার চেয়ে কমপক্ষে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী আইস একবার সেবন শুরু করলে এ মাদকে নির্ভরতা চলে আসে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়ানো এই মাদকদ্রব্য পাচার করে দেশে আনছেন কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিরা।
গত ৩ মার্চ রাতে জেলার টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া এলাকা থেকে দুই কেজি আইসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ছাড়া গত দেড় বছরে ঢাকায় ছোট আকারের আরো চারটি চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তদন্তকারী ও বিশেষজ্ঞদের সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দাম বেশি হওয়ার কারণে দেশে আইসের বড় বাজার না থাকায় বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে এটি মূলত অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকায় পাচার করাই কারবারিদের প্রথম লক্ষ্য।
যদিও বাংলাদেশেও অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরির চেষ্টা করছে পাচারকারী ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত চক্র। রাজধানীর কিছু বিত্তশালী মাদকসেবী এরই মধ্যে আইস গ্রহণ শুরু করেছে, যা আনা হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে, গোপন অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমে অর্ডার দিয়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইস সেবনের পর মানবদেহে অতি অল্প সময়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এই মাদক সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এটি হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভারেরও ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে। এককথায় এটি দ্রুত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
মাদকের এই বিস্তার নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলে যাওয়ার আগেই সর্বাত্মকভাবে তা প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।