আইনকানুনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকলে কিংবা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হলে স্বার্থান্বেষীরা নানাভাবে তার সুযোগ নিয়ে থাকে। বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থায় তেমনটাই লক্ষ করা যায়। এখানে পণ্যের দাম বাড়াতে উৎপাদক বা বিক্রেতার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ডিমের দাম নিয়ে অনেক তেলেসমাতি হয়েছে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ডিমের ডজন যেখানে বাংলাদেশি টাকার হিসাবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সেখানে আমাদের ডিম কিনতে হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। আরো অনেক পণ্যেরই হাল একই রকম। একই ধারাবাহিকতায় এবার বেড়েছে বোতলের পানির দাম। আধা লিটারের এক বোতল পানির দাম ছিল ১৫ টাকা।
সম্প্রতি পাঁচ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ টাকা। এটি প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২-এর লঙ্ঘন বলেই মনে করা হচ্ছে।বাংলাদেশে অনেক পণ্যেরই মূল্য নির্ধারণে কোনো যুক্তি মানা হয় না। অভিযোগ আছে, অতিজরুরি ও জীবন রক্ষাকারী পণ্য ওষুধের মূল্য নির্ধারণেও যৌক্তিকতা মানা হয় না।
অথচ বাজারে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। হঠাৎ বোতলজাত পানির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে বাজার ও উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।সম্প্রতি রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যালয়ে বোতলজাত পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং বোতলজাত পানি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি খরচ, আমদানি কর, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, সম্পূরক শুল্ক এবং সরবরাহের খরচ বাড়ার কারণে পানির দাম বাড়াতে হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুসারে পানির প্রধান কাঁচামাল রেজিনের দাম ক্রমান্বয়ে কমছে।২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর কেজিপ্রতি দাম ছিল ১৪৮ টাকা, গত সেপ্টেম্বরে ছিল ১৪২ টাকা এবং অক্টোবরে হয়েছে ১৩৬ টাকা। কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বোতলজাত পানির মূল্যবৃদ্ধির আগের ও পরের কস্ট শিট চাওয়া হয়েছে।কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসান দিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না—এটা যেমন সত্যি, আবার এটাও সত্যি যে লাভের একটি সীমা থাকতে হবে। সুযোগ বুঝে ভোক্তার পকেট কাটা যাবে না। ভোক্তার স্বার্থ দেখা রাষ্ট্রের কর্তব্য। সে কারণেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কিন্তু তাদের নানাবিধ দুর্বলতার কারণে বাজারে বহু রকম অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। আমরা আশা করি, বোতলজাত পানির মূল্য যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।