সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ কলঙ্কিত হয়েছে। এরপর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এখলাসপুর গ্রাম, তারপর লক্ষ্মীপুরের রামগতি। ক্ষোভে উত্তাল দেশ। ধর্ষণ-নিপীড়নের প্রতিবাদে রাজপথের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন পালন করছে মানববন্ধন, সমাবেশ ও গণ-অবস্থান কর্মসূচি। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছে দেশের মানুষ। উচ্চারিত হচ্ছে ঘৃণা। কিন্তু তার পরও থেমে নেই নিপীড়ন, নারীত্বে অবমাননা।
গণমাধ্যম তো সেই খবরই দিচ্ছে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের এক কিশোরীকে অপহরণের পর লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ১৩ দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার খালুর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গত বুধবার রাতে আটক করে পুলিশে দিয়েছে কিশোরীর পরিবারের লোকজন। গাজীপুরের কাশিমপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই যুবকের বিরুদ্ধে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে শিশু ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার মা-ভাই এবং পাবনার চাটমোহরে গৃহবধূকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঝালকাঠিতে বিয়ের কথা বলে তরুণীকে ধর্ষণ করে, আপত্তিকর ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শেরপুরে নালিতাবাড়ীতে শিশু গৃহকর্মী ধর্ষণে অভিযুক্ত গৃহকর্তা পল্লী চিকিৎসক হারুন অর-রশীদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া এলাকায় যমজ বোনসহ তিন শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক বাড়ির মালিককে আটক করা হয়েছে।
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। গত বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে এসংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব তোলা হবে। দেশে বর্তমানে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ নম্বর ধারায়ও ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথা বলা আছে। তবে এ আইনে ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা আছে। যদিও ভারত, ইরান, চীন, গ্রিস, রাশিয়াসহ এশিয়া-ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড, শিরশ্ছেদ, প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান প্রচলিত আছে।
ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের একেকটি ঘটনা কিছুদিন পর পর সারা দেশকে নাড়া দিয়ে গেলেও এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম।
ধর্ষণের বেশির ভাগ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় ধামাচাপা পড়ে যায়। তা ছাড়া ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, সামাজিক জড়তা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বিচারে বিলম্ব হওয়া বিচারহীনতারই শামিল। তবে আইন করলে বা প্রচলিত আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আনা হলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত বিচারের পাশাপাশি বিশেষ আদালত গঠন করা গেলে দ্রুত বিচার ও দণ্ড কার্যকর সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন