করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ২৫ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ১১ কোটি। টিকা দেওয়া শুরু হলেও এখনো খুব একটা নিয়ন্ত্রণে আসেনি সংক্রমণ। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের আরো মারাত্মক নতুন নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। নতুন ধরনের এসব ভাইরাস অনেক বেশি সংক্রামক এবং এসবে আক্রান্তদের মৃত্যুর হারও বেশি। ভারতেও এমন একাধিক ধরন শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশেও কয়েকজনের শরীরে যুক্তরাজ্যের অতি সংক্রামক ধরন পাওয়া গেছে। ফলে আপাতত আক্রান্তের হার কিছুটা কম থাকলেও যেকোনো মুহূর্তে তা বেড়ে যেতে পারে।
এ জন্য চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা মাস্ক পরাসহ জরুরি স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ করছেন। তাঁদের মতে, যাঁরা টিকা নিয়েছেন এবং যাঁরা নেননি—সবাইকেই মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া বারবার হাত ধোয়া, কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টোটা। রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ, শপিং মলসহ জনসমাগমের স্থানগুলোতে দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষই মাস্ক পরছে না। মাস্ক ছাড়াই গণপরিবহনে মানুষ গাদাগাদি করে চলাচল করছে। এমনকি হাসপাতালে আসা রোগী বা তাদের স্বজনদেরও অনেকেই মাস্ক পরে না। আবার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতির কারণে অনেকে ব্যাংক-বীমা কিংবা সরকারি-বেসরকারি অফিসে ঢোকার আগে মাস্ক পরে এবং অফিস থেকে বেরিয়েই মাস্ক খুলে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এমন অনীহার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
অনেক দেশে করোনা মহামারি প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। লকডাউন প্রত্যাহার করে রেস্তোরাঁ, বারসহ প্রায় সব বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার সেসব দেশ লকডাউনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। টিকা এলেও সব ভেরিয়েন্ট বা ধরনের ক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
টিকার সরবরাহও খুব কম। অনেক দেশ এখনো টিকাদান কর্মসূচি শুরুই করতে পারেনি। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে আমরা এরই মধ্যে ৯০ লাখ ডোজ টিকা পেয়ে গেছি। মোট তিন কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার জন্য চুক্তি রয়েছে। কিন্তু আমাদের টিকার প্রয়োজন হবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ। ভারত নিজেদের বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মিটিয়ে কত দ্রুত ও কী পরিমাণ টিকা সরবরাহ করতে পারবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। আর টিকা দিলেই কেউ সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে গেছে, এমন ভাবারও কারণ নেই। যত দিন করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণে না আসছে, তত দিন সব দেশই সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবে। তাই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
আমরা আশা করি, মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ক্ষেত্রে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকার আগে যেসব কর্মসূচি চালু করেছিল, তা আবার যথাযথভাবে পালন করা হবে। গণপরিবহন ও জনসমাগমের স্থানগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে।