সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী রয়েছে ব্রাজিলে। সেখানে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যাও বেশি। তার পরও সেখানে আক্রান্ত অনুপাতে মৃত্যুর যে হার, বাংলাদেশে সেই হার ব্রাজিলের তুলনায় ৯ গুণেরও বেশি। কারণ এ সময় যেখানে-সেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে এবং ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশবিস্তার দ্রুততর হয়। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এখন সারা বছরই দেখা যায়। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ বছর অক্টোবর-নভেম্বরে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছিল সর্বাধিক। অর্থাৎ সংক্রমণ চূড়ায় উঠেছিল এই দুটি মাসে। এ বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে অর্থাৎ শীতেও অনেক রোগী ছিল। তাই ধারণা করা হয়েছিল, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বাড়তে পারে। ডেঙ্গু ও মশা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা এ ব্যাপারে যথাসময়ে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু মশা নিধনে উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডিসেম্বর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ চূড়ার কাছাকাছি থাকতে পারে।
সাধারণত বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
জানুয়ারির মাঝামাঝি গিয়ে প্রকোপ কমতে পারে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯০ হাজার ৯৭৭ জন। এর মধ্যে নভেম্বরের ২৯ দিনে ভর্তি ২৮ হাজার ৯৭৭ জন, যা মোট রোগীর ৩১.৯১ শতাংশ। আগের বছর একই সময়ে আক্রান্ত হয় ৪০ হাজার ৭১৬ জন, যা মোট রোগীর ১২.৬৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৮৫ জনের। দেশের ইতিহাসে মৃত্যুর এই সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে মশা ওষুধ প্রতিরোধীও হয়ে উঠছে। মানুষের সচেতনতার অভাবও রোগ বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। মানুষ যত্রতত্র পলিথিনের ব্যাগ, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে। সেগুলোতে জমা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। ফুলের টব, পাত্রে জমানো পানি, নির্মাণাধীন ভবনে জমা পানিসহ আরো অনেক স্থানে মশা বংশবিস্তার করে। সেগুলো রোধ করতে হবে।আমরা মনে করি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।