রাজধানী ঢাকার রাজনীতিতে মশা সব সময়ই একটা বড় ইস্যু। সাবেক মেয়র হানিফ, সাদেক হোসেন খোকা এবং সাঈদ খোকনের সুনামহানির কারণ হয়েছিল বেপরোয়া মশা। এমনকি প্রয়াত জনপ্রিয় মেয়র আনিসুল হকও মশা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। এ কারণে রাজধানীর বর্তমান দুই মেয়রকে এ ব্যাপারে একটু বেশি সজাগ থাকতে হবে।
এ মুহূর্তে রাজধানীতে মশার উপদ্রব একটু বেশিই। মশার এ যাতনা উভয় সিটি করপোরেশনের জন্যই ভালো খবর নয়। মশা দুই সিটি করপোরেশনের সুনামে হুল ফুটাচ্ছে! মশার দাপট আরও নাকি বাড়বে। দোহাই মেয়রদ্বয়, আপনারা মশা ঠেকান! প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মশা নির্মূলে কী করছে দুই সিটি করপোরেশন? ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণে মশা নিধনের জন্য এক হাজারের ওপর মশক শ্রমিক কর্মরত আছে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫/৬ জন কর্মী আছে বলে পত্রিকায় জেনেছি, যাদের কাজ শুধু মশার ওষুধ ছিটানো। প্রতিবছর মশা নির্মূলে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় দুই সিটি করপোরেশন। এত কিছুর পরও রাজধানীতে মশার প্রকোপ বেড়েছে কেন? এই বিপুল জনবল আর বিপুল পরিমাণ অর্থের সঠিক ব্যবহার হলে তো নগরীতে এভাবে মশা থাকার কথা নয়।
শোনা যায়, লোকবল আছে, ওষুধ আছে; কিন্তু সে ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হয় না। এ ক্ষেত্রে কোনো মনিটরিং নেই। লক্ষ করা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু অভিজাত এলাকা ছাড়া অন্যত্র মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রামের বাস্তবায়ন কম, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সব এলাকার সব নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। দিনভর পরিশ্রম করে একটি নির্বিঘ্ন ও সুখকর রাত সবাই প্রত্যাশা করে। আমাদের মনে রাখা উচিত, বিশাল বিশাল অট্টালিকার বাইরেও এ মহানগরীতে প্রায় ৪০ লাখ লোক বস্তিতে বসবাস করে। মূল কথা হলো, যেসব জায়গায় মশা জন্ম নেয়, সেখানে ওষুধ পড়েই না। কর্মীরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমালে মশা তো বাড়বেই। পত্রিকায় মশা বাড়ার খবর ছাপা হলে কিছুটা দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। এভাবে নগরীর মশা নিধন হবে না। মশা নিধনের জন্য অর্থ ও জনবলের পাশাপাশি মনিটরিং দরকার।
মশা নিধন করা না গেলে ডেঙ্গিসহ মারাত্মক সব রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ন্যূনতম গাফিলতি চলবে না। তবে সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে এ কাজ করা খুব সহজসাধ্য হবে না, যদি-না নগরবাসীর কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা আসে। নগরবাসীর উচিত নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখা। কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ও ব্যবস্থার পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধই পারে এ নগরকে মশামুক্ত রাখতে।