মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। সেই পানিতে বংশবিস্তার করছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা। একই সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এরই মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের আটজন এবং ঢাকার বাইরের ২৬ জন রয়েছে।চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৮৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৯৩ জন নারী এবং এক হাজার ১৭২ জন পুরুষ। এই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছে ২৩ জন।সাধারণত ডেঙ্গু বেশি ছড়ায় বর্ষাকালে। বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার দ্রুততর হয়। এই মশা খুব সামান্য পানিতেই প্রজনন করতে পারে।
মানুষ যত্রতত্র পলিথিন, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে। সেগুলোতে বৃষ্টির যে সামান্য পানি জমা হয়, তাতেই এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া অনেকে ছাদে, বারান্দায় ফুলের টব রাখে এবং সেগুলোতে পানি জমে থাকে।অনেকের ঘরেও পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা হয় এবং তাতে মশা ডিম ছাড়ে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়।শহর এলাকায় দুই বাড়ির মধ্যখানে রীতিমতো আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। সিটি করপোরেশনের লোকজন ওষুধ ছিটানোর জন্যও সেসব জায়গায় ঢুকতে পারে না। আবার বহুতল ভবনের ওপরের দিকে ছিটানো ওষুধের প্রভাবও কম হয়।এভাবে শহরাঞ্চলে মশার বংশবিস্তার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে এবং ডেঙ্গু দ্রুত ছড়ায়। কীটতত্ত্ববিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে মশা প্রজননের উৎসস্থলগুলো দ্রুত ধ্বংস করা অত্যন্ত জরুরি।বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই ধারণা দিয়েছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানি ও মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে। তাদের সে আশঙ্কা এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কিন্তু এ কারণে জনস্বাস্থ্যে যে প্রভাব পড়বে, পরিকল্পিত উপায়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসনকে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।মশার বংশবিস্তার রোধে মানুষকে সচেতন করতে হবে। নির্মাণাধীন ভবনসহ যেসব স্থানে মশার বংশবিস্তার বেশি হয়, সেসব স্থানে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আমরা আশা করি, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মশা নিধনে যথেষ্ট অগ্রগতি হবে এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।