মানুষ শখ করে কিংবা অতিথি আপ্যায়নের জন্য মিষ্টি কেনে। কিন্তু তারা কি জানে, অর্থ দিয়ে তারা কী বিপদ কিনে আনছে? গত বছর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভেজালবিষয়ক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রায় ৫০ শতাংশ মিষ্টিতেই ভেজাল রয়েছে। রাজধানী ও তার আশপাশের অনেক কারখানায়ই ভেজাল মিষ্টি তৈরি হয়। নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ গুঁড়া দুধ, আটা-ময়দা মিশিয়ে তৈরি হয় ভেজাল ছানা। এই ছানার সঙ্গে ক্ষতিকর সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘন চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় নানা রকমের মিষ্টি।
অনেক কারখানায় ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নামে এক ধরনের সারও মেশানো হয়। মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতির নেতারাও স্বীকার করেছেন এমন সব কারখানার কথা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, এ ধরনের ভেজাল মিষ্টি খেলে তাত্ক্ষণিকভাবে ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া লিভার ও কিডনি ফেইলিওর হতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। ম্যাগনেসিয়াম সালফেটও শরীরে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। এসব ভেজাল প্রতিরোধে সরকারের অর্থে পরিচালিত অনেক সংস্থা রয়েছে। তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে খোদ রাজধানীতেই চলে আসছে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই ভেজাল মিষ্টির রমরমা ব্যবসা।
শুধু মিষ্টি নয়, আরো অনেক খাবারেই মেশানো হয় অত্যন্ত ক্ষতিকর সব রাসায়নিক উপাদান। মাছে ও দুধে ফরমালিন, ফল পাকাতে কার্বাইড, মুড়িতে ইউরিয়া, এমনি আরো কত কী! গুঁড়া মসলা, চানাচুর ও রঙিন খাবারে ব্যবহার করা হয় শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কাপড়ের রং।
শুধু তা-ই নয়, মুরগিকে দেওয়া খাবার বা পোল্ট্রি ফিড তৈরি হয় ট্যানারিশিল্পের বর্জ্য দিয়ে। অথচ এই বর্জ্যে ক্রোমিয়ামসহ এমন সব বিষাক্ত রাসায়নিকদ্রব্য থাকে, যেগুলো দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকে এবং মুরগির মাংসের মাধ্যমে সেগুলো মানবদেহে চলে আসে। শাক-সবজির পোকা মারতে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক এবং সেই কীটনাশকের প্রভাব কাটার আগেই তা বাজারে বিক্রি করা হয়।
নিরাপদ খাদ্য অধ্যাদেশ ২০০৫ অনুযায়ী খাদ্যে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, ইটোফেন, কীটনাশক বা বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন থাকলে কী হবে, তার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
দেশে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকরা এর জন্য প্রধানত ভেজাল খাদ্যকেই দায়ী করছেন। খাদ্যের ভেজাল প্রতিরোধে সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন