বাঁচার জন্য খাদ্য অপরিহার্য। আর সেই খাদ্যেই মেশানো হচ্ছে বিষ। এমন কোনো খাদ্য পাওয়া কঠিন, যাতে ভেজাল বা বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয় না। কোনোটা প্রত্যক্ষভাবে আর কোনোটা পরোক্ষভাবে মানবদেহে বিষক্রিয়া ঘটাচ্ছে।
মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে কঠিন রোগব্যাধিতে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তেমন কিছুই করা হচ্ছে না। উত্পাদক থেকে বিক্রেতা পর্যন্ত প্রায় সবাই মানুষ মেরে মুনাফা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা বা মূল্যবোধের কোনো বালাই নেই বললেই চলে।প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মাঠ পর্যায়ে সঠিক ও নিয়মিত তদারকির অভাবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী উত্পাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত ক্ষতিকর উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খাদ্য তৈরি করছে। দেশে বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। ভেজাল খাদ্য তৈরিতে রাসায়নিক থেকে শুরু করে ভারী ধাতব পদার্থের মতো এমন উপাদান মেশানো হচ্ছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজার থেকে ৪৭ ধরনের খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন পরীক্ষাগারে (ল্যাব) পরীক্ষা করে।এসব খাদ্যপণ্য ৬১টি মানদণ্ডে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফল অনুসারে ৩৪টি মানসম্মত ছিল। আর ২৭টিতে বিরূপ ফল পাওয়া যায়। এসব খাদ্যপণ্য সঠিক মানের ছিল না। ১৫ ধরনের খাদ্যপণ্যে ভেজাল বা ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়।একইভাবে কোমল পানীয়ের ২৬টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৯টিতে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন পাওয়া যায়। বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের সসের মোট ৭৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৬২টি নমুনায় অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে বেনজয়িক এসিড পাওয়া যায়। ১৬টিতে মাত্রাতিরিক্ত বেনজয়িক এসিড ছিল।ফলেও বিষ মেশানো হচ্ছে। ফল পাকাতে ব্যবহার করা হয় অত্যন্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ কার্বাইড। আবার ফলের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হয় ফরমালিন। গাছে থাকতে ফলে পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের কীটনাশক বা বিষ। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এমন সব তীব্র বিষ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা খুব কম দেশেই ব্যবহূত হয়।ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে তা কার্বামেট আকারে ফসলে জমা হয় এবং আর্সেনিকের মতোই এটি মানবদেহে বিষক্রিয়া ঘটায়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল খাদ্যে থাকা রাসায়নিক ও ধাতব পদার্থের প্রভাবে মানুষ হূদরোগ, ক্যান্সারসহ লিভার ও কিডনির নানা অসুখে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অসুস্থ হলে যে ওষুধ খেয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা করবে, সেই ওষুধেও ব্যাপকভাবে ভেজাল শুরু হয়েছে।খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে কী খাচ্ছি আমরা? এ প্রশ্নটা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ভাবতে হবে। দেশে উত্পাদিত খাদ্যপণ্য যেন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা না দেয়, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।