বাংলাদেশে প্রতিবছর যত মামলা-মোকদ্দমা হয় তার ৮০ শতাংশেরও বেশি হয়ে থাকে ভূমিসংক্রান্ত বিরোধের কারণে। যত মারামারি, খুনাখুনির ঘটনা ঘটে তারও একটি বড় অংশ ঘটে থাকে জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারণে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে যাদের বড় ভূমিকা রাখার কথা ছিল সেই ভূমি অফিসগুলোই দুর্নীতির মাধ্যমে বিরোধ আরো উসকে দিচ্ছিল। যুগের পর যুগ এমন অবস্থা চলে এলেও কোনো সরকারই ভূমি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ভূমি অফিসের সব কার্যক্রম ডিজিটাল করাসহ ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়। এ জন্য নেওয়া হতে থাকে একের পর এক প্রকল্প। তার সুফলও মিলতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সরকার সম্পূর্ণ ভূমিব্যবস্থাকে ডিজিটাইজ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষ যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, দুয়ারে দুয়ারে না ঘুরতে হয় আমরা সেই ব্যবস্থা করছি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সেবাদানকারী সব দপ্তর ও সংস্থাকে এক ছাদের নিচে এনে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘ভূমি ভবন’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভূমি ভবন ছাড়াও ১২৯টি উপজেলা ভূমি অফিস, ৯৯৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংক উদ্বোধন করেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভূমি অফিসগুলো ছিল অত্যন্ত অরক্ষিত। টিনের ঘরে থাকা অনেক অফিসে বৃষ্টির পানি, আর্দ্রতা ও অন্যান্য কারণে প্রায়ই দলিল-দস্তাবেজ নষ্ট হয়ে যেত। মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যেত। এ সমস্যা সমাধানে সরকার সারা দেশে এক হাজার ৪৯৮টি ইউনিয়নে ভূমি অফিস নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এর মধ্যে ৯৯৫টি অফিস উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাকিগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে মিউটেশন শতভাগ সম্পন্ন করার মাধ্যমে ভূমিব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটাইজ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ, উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর, অনলাইন ডাটাবেইসসহ ভূমিসেবার সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের এসব উদ্যোগের স্বীকৃতিও মিলছে।
ই-মিউটেশন বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করেছে। জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভূমি অফিসের দুর্নীতি, মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে সমালোচনার যেন কোনো অন্ত ছিল না। আশা করা যায়, সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে সেই চিত্র আমূল বদলে যাবে। সেবা পাওয়া আরো অনেক সহজ হবে।