‘সবার জন্য শিক্ষা’—এই লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার বেড়েছে। শিক্ষার ভিত্তি গড়ে ওঠে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সেগুলোর মানও সবখানে সমান নয়। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
শহর ও গ্রামের স্কুলের মধ্যে বিস্তর ফারাক। গ্রামের স্কুলগুলোতে উপযুক্ত ভবন নেই, আসবাব বা শিক্ষা উপকরণ নেই বললেই চলে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোনো কোনো স্কুল ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পাঠদান হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
এ রকমই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে গত বুধবার। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে শিক্ষার্থীদের। আলাদা কক্ষ না থাকায় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এই ব্যবস্থা নিয়েছেন উপজেলার শাখারুঞ্জ চৌধুরীপাড়া আলিয়া তফিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ছয় মাস ধরে এভাবেই প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে। বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই বিদ্যালয় ভবনটি ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের মাত্র ২২ বছরের মধ্যেই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর ছাদ এবং গ্রেড বিমে দেখা দিয়েছে ফাটল। মাঝেমধ্যেই দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেবে গেছে ঘরের মেঝেও। বিকল্প ব্যবস্থা করতে না পেরে ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন ১০৭ জন শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করছে। যেখানে তাদের নিয়মিত পাঠদান করাছেন পাঁচজন শিক্ষক।
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এর প্রাথমিক কাজটি সম্পন্ন হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সে জন্য স্কুলে পাঠদানের পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা, লাইব্রেরি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দেশের কয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেই পরিবেশ আছে? অনেক বিদ্যালয়ে ভবনটি ছাড়া আর কোনো খালি জায়গা নেই। অনেক ভবনই যে ব্যবহারের উপযোগী নয়, বুধবারের খবরটিই তার প্রমাণ।
আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক, শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের ওপরই নির্ভর করে দেশের ভবিষ্যৎ। অথচ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সমমানের করে গড়ে তোলা গেল না। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শাখারুঞ্জ চৌধুরীপাড়া আলিয়া তফিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধু নয়, সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ব্যবহারের উপযোগী করা হোক।