অসুস্থ মানুষ রোগ থেকে মুক্তি পেতে বা সুস্থ হতে হাসপাতালে যায়, কিন্তু সেই হাসপাতালই রোগীর দেহে আরো অনেক জীবাণু সংক্রমিত করে। ফলে এক রোগ ভালো হলেও অন্য রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত জীবাণুগুলোর বেশির ভাগই হয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। ফলে নতুন সংক্রমণ থেকে সেরে উঠতে রোগীর অনেক বেশি সময় লাগে এবং খরচ বাড়ে কয়েক গুণ।
তাহলে রোগীরা চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবে?
সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতালেই জীবাণু প্রতিরোধী ব্যবস্থার দুর্বলতা রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে রোগীর অত্যধিক চাপ, শয্যার চেয়ে অনেক বেশি রোগী রাখা, রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন বা ভিজিটরদের অসচেতনতাও পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করছে। এসব বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
গবেষণাটি পরিচালনা করে রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত হাসপাতালের সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে পরিচালিত এই গবেষণায় সরকারি ১১টি মেডিক্যাল কলেজ, ১১টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, ১১টি জাতীয় ইনস্টিটিউট এবং চারটি করপোরেট হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়।
এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ২৪ শতাংশ হাসপাতালে সংক্রমণ পতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত।
হাসপাতালগুলোর মধ্যে ৪১ শতাংশের রয়েছে প্রাথমিক ব্যবস্থা এবং ১৯ শতাংশের রয়েছে মাঝারি ধরনের ব্যবস্থা। মাত্র ১৬ শতাংশের উন্নত সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বা আইপিসি ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত ও প্রাথমিক হলে এটিকে দুর্বল হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে ৬৫ শতাংশ হাসপাতালে আইপিসি ব্যবস্থা দুর্বল। সরকারি হাসপাতাল ও জাতীয় ইনস্টিটিউটে এই হার ৮২ শতাংশ।
বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫ শতাংশ। তবে নন-টিচিং করপোরেট হাসপাতালগুলোতে এই হার প্রায় শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটি ৩৭ লাখ মানুষ মারা যায় সংক্রমণজনিত কারণে। এর একটি বড় অংশই হাসপাতালে সংক্রমিত হয়।
পশ্চিমা দেশগুলোতে এমন সংক্রমণের হার ৩ থেকে ৫ শতাংশ হলেও এশিয়ার দেশগুলোতে এই হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অনেক দেশে পরিস্থিতি আরো খারাপ। এর প্রধান কারণ হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা।
আমরা মনে করি, দেশের হাসপাতালগুলোর সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো জোরদার করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ উন্নত করতে হবে।